বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বান, রবীন্দ্রনাথের 'সোনার বাংলা' গান, পাক বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যা ও নারীধর্ষণের সংবাদ আমাকে উদ্বেল করে তুললো । আমি লক্ষ্মী ছেলেটির মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। মায়ের বাঁধন, স্নেহের বাঁধন ছিন্ন করে রাইফেল কাঁধে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লাম । এ এক অসম লড়াই । দেশের সেনাবাহিনীর সাথে লড়তে হবে, পেছনে গৃহশত্রুরা ওৎ পেতে আছে। প্রয়োজনীয় অস্ত্র-শস্ত্র গোলাবারুদ নেই, খাদ্যের অনটন, বাসস্থানের অভাব, বন- বাদাড়ে রাত্রি বাস । গৃহশত্রুর ধরিয়ে দেবার ভীতি । এরই মধ্য থেকে আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে। ন' মাসের যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি, বাংলাদেশ জন্মলাভ করেছে। এটাই আমাদের আনন্দ ও গর্ব । আমাদের সহযোদ্ধারা অনেকে শহীদ হয়েছে, কেউ কেউ পঙ্গু হয়েছে। জীবিত মানুষদের ইতিহাস লিখতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছি। সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছি, স্বাধীনতা বিরোধীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখাতে পারছি না । হেমায়েত বাহিনীর সবাইকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তারা আমার সহযোদ্ধা। আমি কাউকে ছোট করার চেষ্টা করিনি। আবার কাউকে অযথা বড় করেও দেখাতে পারিনি। এই ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একখানা প্রামাণ্য দলিল । তাতে মিথ্যের স্থান দেয়া যায় না। আমি ইতিহাসবিদ না হলেও এ কথা জানি যে, History is based on facts. অপ্রিয় হলেও আমি Facts-কে বিকৃত করিনি। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, শহীদের রক্ত ব্যর্থ হয় না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অগ্রগতি অনিবার্য। রবীন্দ্রনাথের সাথে আমিও একমত— 'বীরের এ রক্তস্রোত, মায়ের এ অশ্রুধারা, এর যত মূল্য সে কি ধূলির ধরার হবে হারা' ।