"লড়াকু পটুয়া" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ডকুমেন্টারি ভঙ্গিতে লেখা লড়াকু পটুয়া শিল্পী কামরুল হাঁসানের জীবনীভিত্তিক উপন্যাস। সুলতান, নভেরা এবং একজন আরজ আলী লেখার অনেক বছর পর আরাে একটি জীবনীভিত্তিক উপন্যাস লিখেছেন লেখক। তিনি জীবনীভিত্তিক উপন্যাস লেখেন কেবল প্রধান চরিত্রের জীবনে বৈচিত্র্যের জন্য না, ঘটনাবহুলতার কারণেও না। তিনি লেখেন তাদেরকে নিয়েই যারা সমকালে এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নির্দিষ্ট বক্তব্য রেখে গিয়েছেন। এই অর্থে তাদের জীবন তার কাছে শিক্ষামূলক এবং আদর্শময়। কামরুল হাসান আধুনিক শিল্প শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও বাংলার গ্রামীণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিশেষ করে লােকনৃত্য, কারুশিল্প ও পটচিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন যা তার চিত্রকর্মে ক্রমেই প্রধান্য পেয়ে তাকে ‘পটুয়া’ অভিধায় অভিষিক্ত করেছে। যামিনী রায়ের সঙ্গে তুলনা করা হলেও কামরুল হাসান এই পটশিল্পের আধুনিকায়ন করেছেন সবচেয়ে বেশি সফলভাবে যে কথা বলা হয়েছে এই উপন্যাস। অনন্য শিল্পী জীবনের পাশাপাশি অগ্রসর হয়েছে সমাজমনস্কতা, প্রগতিশীলতা এবং মানবিক মূল্যবোেধ। প্রচলিত রাজনীতি নয়, সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে কামরুল হাসান ছিলেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পুরােধায়। এর জন্যই তিনি পটুয়া’র সঙ্গে ‘লড়াকু’র খ্যাতিও পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পীর বর্ণাঢ্য এবং কর্মবহুল জীবন যেন। উপন্যাসের বিষয় হয়েই গড়ে উঠেছে, শুরু থেকে শেষ মুহূর্তের নাটকীয় যবনিকা পর্তন পর্যন্ত। এই ভাবে তিনি হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তির নায়ক। এই উপন্যাস আমাদের শিল্পকলার ইতিহাসের উজ্জ্বল এক অধ্যায়ের বিবরণ; একই সঙ্গে সমাজ পরিবর্তনের দলিল।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।