কেউ যখন কোন ভাষায় রচিত সাহিত্য পাঠ করেন, কিংবা ঐ ভাষার কোন লেখা বা কথা বুঝতে চান, তখন তার বােধগম্য ভাষার প্রতিশব্দ সম্বলিত ঐ ভাষার একটি অভিধানের প্রয়ােজন হয়। আবার কেউ যদি একটি ভাষার কোন রচনা ভিন্ন ভাষায় ভাষান্তরিত করতে চান, তখন তার এই ভিন্ন ভাষার প্রতিশব্দ সম্বলিত মূল ভাষার একটি অভিধান প্রয়ােজন হয়। আরবী শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বাংলা ভাষাভাষী সকলে এই দু'রকম প্রয়ােজনে আরবী-বাংলা ও বাংলা-আরবী উভয় প্রকার অভিধানের প্রয়ােজন অনুভব করেন। ভাষা-সাহিত্যের পরিবর্তনশীল প্রয়ােজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমরা ইতিপূর্বে আরবী-বাংলা, আরবী-ইংরেজী-বাংলা ও বাংলা-ইংরেজী-আরবী ব্যবহারিক অভিধান (আল-কৃামূসুল ওয়াজীয); “আল-কাঁফী” আরবী-বাংলা অভিধান এবং আধুনিক আরবী বাংলা ও বাংলা-ইংরেজী-আরবী অভিধান (আল-মুজামুল ওয়াফী) প্রকাশ করেছি। আমাদের এবারের প্রয়াস “আশ-শাফী” পূর্বের আধুনিক বাংলা-ইংরেজী-আরবী অভিধান (আল-মুজামুল ওয়াফী)-এর পরিমার্জিত সংস্করণ। এই অভিধানের এন্ট্রিসংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজার। এতে আরবী ও ইংরেজী উভয় প্রকার প্রতিশব্দ যথেষ্ট পরিমাণে দেওয়া হয়েছে। সঠিক উচ্চারণের সুবিধার্থে সকল আরবী প্রতিশব্দে হরকত ব্যবহার করা হয়েছে এবং ইংরেজী প্রতিশব্দের বাংলা উচ্চারণ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, এই অভিধান আরবী শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা-আরবী অভিধানের কাজ দেবে, তেমনি সকল শিক্ষার্থীর জন্য একটি বাংলা-ইংরেজী অভিধানের প্রয়ােজনও পূরণ করবে। এই অভিধানে সাধারণ বিশেষ্য শব্দের সাথে সাথে দেশ, মহাদেশ, প্রধান প্রধান নগরী, বিভিন্ন ভাষা ইত্যাদির নামসহ অনেক নাম-বিশেষ্য নিয়মিত এন্ট্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; কারণ নাম হলেও বিভিন্ন ভাষায় এগুলাের উচ্চারণ বিভিন্ন হয়ে থাকে। যে কারণে সঠিক বানান জানা না থাকায় অনেকেই সংশ্লিষ্ট ভাষায় এগুলাে লিখতে, পড়তে ও বলতে ভুল করে থাকেন। ক্রিয়া এন্ট্রির ক্ষেত্রে বাংলা ক্রিয়ার মূল রূপ যেমন- করা, খাওয়া, যাওয়া, সাহায্য করা, প্রশংসা করা ইত্যাদি এন্ট্রি করা হয়েছে এবং তার আরবী প্রতিশব্দ হিসেবে আরবী ক্রিয়ার অনেকগুলাে রূপের মধ্যে কেবল প্রথম (অতীত কালের পুরুষবাচক একবচন নামপুরুষ) রূপটি ব্যবহার করা হয়েছে; যদিও বাক্যের মধ্যে ব্যবহারকালে এই রূপটির অর্থ হয়: সে (পুরুষ) করেছে, খেয়েছে, গিয়েছে, সাহায্য করেছে, প্রশংসা করেছে ইত্যাদি। এটাই দ্বিভাষিক বা বহুভাষিক অভিধান প্রণয়নের সুবিধাজনক সাধারণ নিয়ম। এক্ষেত্রে পাঠক শুধু উভয় ভাষার মূল ক্রিয়ারূপ লক্ষ্য করবেন এবং বাক্যে ব্যবহারকালে ক্রিয়ার কাল, কর্তার লিঙ্গ, বচন, পুরুষ ইত্যাদি লক্ষ্য রেখে সংশ্লিষ্ট ভাষার ব্যাকরণ অনুসারে তা ব্যবহার করবেন। দেশ-বিদেশের অগণিত বাংলা ভাষাভাষী আরবী ও ইংরেজী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সুবিধার জন্য আমাদের এই প্রয়াস। এতে দীর্ঘদিনের নিরলস ও আন্তরিক শ্রম ব্যয়িত হয়েছে। তথাপি এই প্রয়াস সর্বাঙ্গীন সুন্দর, নিখুঁত ও সম্পূর্ণ ফলপ্রসূ হয়েছে তা নয়। তাই ভবিষ্যতে এর পরিমার্জনে আমরা বিদগ্ধ ও দরদী পাঠকের মূল্যবান দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রত্যাশা করব। ইংরেজীর মত বাংলা ও আরবী কম্পিউটার কম্পােজের নিখুঁত ব্যবস্থা এখনাে আমাদের হস্তগত হয়নি। একেক ব্যবস্থায় একেক রকম সুবিধা ও অসুবিধা থাকে। আবার আরবীর সাথে একত্রে অন্য ভাষার কম্পােজে কিছু কিছু বিঘ্ন ও জটিলতা সৃষ্টি হয়। এসব অসুবিধা কাটিয়ে কম্পিউটারে এই অভিধান কম্পােজ করতে প্রােগ্রাম পুনর্বিন্যাস ও ফন্ট সংস্কারসহ নানাভাবে সহায়তা করেছে আমার ছােট ছেলে কম্পিউটার বিজ্ঞানী রেদওয়ানুন নূর রেদওয়ান। আর এর প্রাথমিক কম্পােজ ও বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেছে বড় ছেলে খালেদ সাইফুল্লাহ রিয়াদ। ওদের সহায়তা ছাড়া কাজটিকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হতাে না। এছাড়া আমার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী ও সারাদেশের অগণিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী এই অভিধান রচনা ও এর পরিবর্ধন-পরিমার্জনের জন্য অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ দিয়ে এই দুরূহ। কাজটির সুসম্পাদন সহজ করেছেন। এদের সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। | আশা করি, পাঠক এই অভিধান থেকে প্রয়ােজনীয় বাংলা শব্দের ইংরেজী ও আরবী প্রতিশব্দ ও তার সঠিক উচ্চারণ জানতে পারবেন এবং বাংলা থেকে ইংরেজী ও আরবীতে অনুবাদের কাজে অনেকটা সহায়তা পাবেন। অভিধানটি বাংলা ভাষাভাষী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আরবী ও ইংরেজী চর্চায় কিছুটা অবদান রাখতে পারলে দীর্ঘদিনের এই পরিশ্রম সার্থক হবে।