বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে উপজীব্য করে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আবুবকর রচনা করেছেন এক বহুকাঙ্ক্ষিত মহাকাব্য, রক্তাক্ত জন্মভূমি। যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ। দেড় শ' বছর পূর্বে মাইকেল মধুসূদন দত্ত কৃত মেঘনাদ বধ বাংলা সাহিত্যে রচিত প্রথম মহাকাব্য, তাতে মিল্টনিক অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রথম সার্থক প্রয়োগ। পরাধীন ভারতে পৌরাণিক কাহিনীকে অবলম্বন করে ভারতের স্বাধীনতার স্পৃহা প্রথম ভাষা পেয়েছিল মধুকবির মেঘনাদ বধ কাব্যে, দেড় শ' বছর পর রচিত হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সত্য ঘটনানির্ভর মহাকাব্য রক্তাক্ত জন্মভূমি। স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম এই কাব্যের মূল বাণী। স্বাধীনতার স্পৃহা ও দেশপ্রেম মানবতার প্রতি মানুষের গভীর ভালবাসা ও অনিঃশেষ দায়বদ্ধতাজাত। স্বাধীনতার জন্যই মানুষের নিরত সংগ্রাম। স্বাধীনতাই সভ্যতার নিয়ামক, মানুষের শ্রেষ্ঠত্বজ্ঞাপক । ভাবে, ভাষায় ও আঙ্গিকে রক্তাক্ত জন্মভূমি রচনায় কবি অনুসরণ করেছেন মধুসূদনকেই। অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত রক্তাক্ত জন্মভূমি আমাদের মানসলোকের প্রতিবিম্ব, আমাদের স্বপ্ন- কল্পনার প্রতিচ্ছবি, বাঙালির অনাগত সাহিত্য-ইতিহাসের ভিত্তিফলক, বাঙালি জাতির স্বপ্নলোকের প্রতিনিধিত্বকারী সাহিত্য। ইতিহাস অবিকৃত রেখে, কল্পনার রশি টেনে ঘটনার অনতিবহিত পরে ইতিহাসনিষ্ট শিল্প সৃষ্টি দুরূহ। কবি এই অসাধ্য সাধনে, কাব্যলক্ষ্মীর সাধনায় কতটুকু সফল হয়েছেন শিল্পরসজ্ঞ পাঠকই তার শ্রেষ্ঠ বিচারক। পাঠকচিত্তকে জয় করে এ মহাকাব্য যুগোত্তীর্ণ হবে কিনা মহাকাল তা বিচার করবে। তবু, সংশয়হীনভাবে এ কথা বলা যায়, রক্তাক্ত জন্মভূমি পাঠকচিত্তকে আলোড়িত করবে, আগামী প্রজন্মকে স্বদেশেতিহাস পাঠে এবং সত্ত্বাসন্ধানে প্ররোচিত করবে, নতুন সৃষ্টিতে নতুন প্রজন্মকে প্রাণিত করবে। আশা করি, বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এই মহাকাব্য সমাদৃত হবে।
সব্যসাচী লেখক মােহাম্মদ আবুবকর একজন বীর মুক্তিযােদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলাধীন বানিয়াবহু গ্রামে ১২ই জুলাই, ১৯৩৫ সালে এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কালীগঞ্জ ভূষণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে যশাের এম.এম কলেজ থেকে তিনি যথাক্রমে আই.এ এবং বি.এ পাশ করেন। তিনি ১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। মাগুরা, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ কেসি কলেজে অধ্যাপনা করেন। সরকারি চাকরিতে যােগদান করেন ১৯৬৬ সালে ২য় শ্রেণির ইপিসিএস অফিসার হিসাবে। ১৯৭৩ সালে বি.সি.এস (প্রশাসন) ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করেন। ১৯৭৫ সালে লেলিনগ্রাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চতর ব্যবস্থাপনায় ডিপােমা অর্জন করেন। সূদীর্ঘ ৩৫ বছর চাকরির পর তিনি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদ থেকে ১৯৯৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। সাহিত্যের সকল অঙ্গনে তার সরব পদচারণা। প্রকাশিত গ্রন্থাবলি :১, ইতিহাস কথা কয় (প্রবন্ধ), ২. রক্তাক্ত জন্মভূমি (মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্য), ৩. এবার একটি যুদ্ধ চাই (কাব্য), ৪. লাঠি পুলিশ মিছিল (প্রবন্ধ), ৫. মুক্তিযুদ্ধে ঝিনাইদহ, ৬. একাত্তরের ডাইরি, ৭. কত শীত বসন্ত পেরিয়ে। এছাড়া প্রকাশের অপেক্ষায় আছে: ১. Ever Erect is my Head; ২. Far Distant Island Lass (নজরুলের কবিতা ও গানের অনুবাদ), ৩. আবার আসিব ফিরে (কাব্য নাটক), ৪. দেখে এলাম রাশিয়া (ভ্রমণ কাহিনী), ৫. অবাঞ্চিত পঙক্তিমালা (কাব্য), ৬. গীতিসুধা (গান)। তার অসংখ্য কবিতা ও প্রবন্ধ দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। জনাব আবুবকর তার মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্য রক্তাক্ত জন্মভূমি-এর জন্য ২০১৪ সালে মহাকবি হিসাবে বাংলাদেশ মুসলিম সাহিত্য সমাজ এবং সার্ক আন্তর্জাতিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংস্থা, কলকাতা কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়ে সম্মামনা স্মারক, সনদ ও পদক অর্জন করেছেন। ছয় জন সফল সন্তানের জনক। ছােটো কন্যা যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং ৪র্থ কন্যা ২০তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য। নানা রােগ-শােকে আক্রান্ত কবির বর্তমান বয়স ৮১ বছর। অবসর জীবন ঝিনাইদহ শহরে বসবাস করছেন।