আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া (আঃ) হাত ধরাধরি করে বেহেশত থেকে নেমে এলেন। আদর্শ স্বামী-স্ত্রীর মতই তাঁরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিসম্পন্ন ছিলেন। এত বড় একটা সর্বনাশের পরেও কেউ কারো প্রতি কোন অনুযোগ-অভিযোগ করেননি। স্বামীর অপরাধ হলেও হয়েছে, স্ত্রীর অপরাধ হলেও হয়েছে। উভয়েই উভয়ের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দুঃখ-বেদনাকে সমভাবে ভাগ করে নিয়ে পথে নেমেছিলেন। কিন্তু তাঁদের বংশধরের অনেকেই তাঁদের ঐ আদর্শ বজায় রেখে চলতে পারল না। নারী-পুরুষের মধ্যে দ্বন্ধ দেখা দিতে লাগল। পরবর্তী যুগে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জাতি নানা ভাবে নারী জাতির অবমূল্যায়ন করা শুরু করে দিল। কেউ নারীকে তাদের ভোগের বস্তু, কেউ পণ্যদ্রব্যের মত এবং কেউ তাকে গৃহপালিত পশুর তুল্য মনে করতে লাগল। কেউ কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। কোন কোন ধর্ম নারীর মানব সত্তাকেই অস্বীকার করে বসল। যেমন রোমের সংসদে সাব্যস্ত করা হয়েছিল যে, নারীরা মানুষ ও প্রাণীর মাঝামাঝি কোন বিশেষ এক শ্রেণী- প্রজাতি যাতে আত্মার অস্তিত্ব নেই। খৃষ্টধর্মের গুরুরা মনে করত এবং আজো মনে করে যে নারীরা আদি মাতা-হাওয়ার অপরাধে অপরাধিণী, পাতকিনী ও বিশ্বাসঘাতিনী। আর এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে মধ্যযুগে লাখেরো অধিক নারীকে ডাইনী হিসেবে খোঁটায় বেঁধে জীবন্ত দগ্ধ করা হল। হিন্দুরা সতীদাহ প্রথা চালু করে দিল। তারা নারীকে অধিকার দিতে গিয়ে স্বামীর চিতায় পুড়িয়েই মেরে ফেলত। দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্যে কন্যাকে বলি দিত গঙ্গাসাগরে জীবন্ত কণ্যাকে নিক্ষেপ করত।