ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা কুড়িজন নারীপুরুষ আর শিশুকে ধরে আনা হয়েছে সীমান্তে। তাদেরকে ঠেলে দেওয়া হবে ওই পারে। কিন্তু ওপারের সীমান্তরক্ষীরাও প্রস্তুত।কাউকে তাদের পারে তারা ঢুকতে দেবে না। সীমান্তের এপারের রক্ষীরা ঠেলে দিল তাদের নো-ম্যান’স ল্যান্ড বা না-মানুষি জমিনে। ওপারের রক্ষীরাও তাদেরকে রুখে দাঁড়াল সঙ্গিন উঁচিয়ে। খুব শীত ছিল তখন ওই এলাকায়। দু রাত প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে পড়ে রইল একদল মানবসন্তান। তাদের মধ্যে একজন নারী গর্ভবতী। কুয়াশার চাদরের নিচে এক কন্যাসন্তান প্রসব করে তিনি মারা গেলেন। তার সঙ্গীরা ততক্ষণে উধাও ঘন কুয়াশার আড়ারে। নো-ম্যান’স ল্যান্ডে পড়ে আছে মানবশিশু। কী তার দেশ? কী তার পরিচয়? এখন কী হবে ওই শিশুটির? এপার ওপার কেউ তার দায়িত্ব নেবে না। কিন্তু রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতিই শেষ কথা নয়। সব কিছুর উর্ধ্বে মানুষের মানুবিকতা। কিংবা মানুষ যেখানে মানবিকতা হারিয়ে ফেলে, সেখানে হয়তো এগিয়ে আসতে হবে কোনো পশুকেই। আনিসুল হক লিখলেন এক নিদারুণ জাদুবাস্তবতার গল্প, যেখানে রঙ্গিন কাপড় পরিস্থিতি এক বাঁদর কাঁটাতারের বেড়ার গায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঝুলে থাকে, যাঁর শোকে কাঁদে মানুষ।
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।