"চরিত্র গঠনের উপায়" বইয়ের প্রকাশকের কথা: চরিত্র গঠনের উপায়। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি কথা। চরিত্রের নৈতিক ভিত্তির উপর মজবুত থাকার মাধ্যমে এটি অর্জন করা যায়। চরিত্র আপনা-আপনি উন্নত বা অনুপম হয় না। এর জন্য অধ্যবসায় ও চর্চার প্রয়োজন হয়। প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআন-সুন্নাহ থেকে অনুপম চরিত্রের জন্য অর্জনীয় ও বর্জনীয় উপাদান সম্পর্কে জানতে হয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা চর্চা করতে হয়।
নৈতিক অবক্ষয়ের সয়লাবে আমাদের বর্তমান সমাজের প্রায় সর্বক্ষেত্র ডুবে আছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের মাঝে চারিত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের সঙ্কট প্রকট রূপ ধারণ করেছে। পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যথাযথ নৈতিক শিক্ষা ও চর্চার মাধ্যমে জাতির ভবিষৎ কর্ণধার এই তরুণ-তরুণীদের আদর্শিকভাবে গড়ে তোলা অপরিহার্য। উন্নত নৈতিক চরিত্রের শ্রেষ্ঠতম নমুনা হলেন, আমাদের প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (স)। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিবের মাঝে ইনসানিয়াতের জন্য প্রয়োজনীয় ও গ্রহণযোগ্য সবটুকু বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি পরিপূর্ণভাবেই দিয়েছিলেন। অন্যদিকে অকল্যাণ ও ক্ষতিকর যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে তিনি ছিলেন সর্বতোভাবে পবিত্র। আর এ জন্য মানবজাতির সার্বিক কল্যাণ ও সাফল্যের জন্য আল্লাহ তাআলা আখেরি নবী মুহাম্মদ (স)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন।
অত্র গ্রন্থের সম্মানিত লেখক জনাব মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা পেশায় দীর্ঘ সময় চরিত্রের ভালো-মন্দ উপাদানের উপর ‘ইসলামিক এথিক্স’ নামক কোর্সে পাঠদান করে আসছেন। ব্যক্তিগতভাবেও এ বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ও পড়াশোনা রয়েছে। লেখকের দীর্ঘ দিনের অধ্যাপনা পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের ফসল এ গ্রন্থখানি। একজন আদর্শ মুসলিমের জন্য অর্জনীয় যেসব বৈশিষ্ট্য বা গুণ রয়েছে এবং যেসব বর্জনীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে তা কুরআন-সুন্নাহর দলীল-প্রমাণ ও বাস্তব যুক্তি-উপমার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়েছে অত্র বইয়ে। একই সাথে এসব বৈশিষ্ট্যের তাৎপর্য-উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিকও আলোচনা করা হয়েছে।
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের সিরাজনগর (নয়াচর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মরহুম মোঃ চান মিয়া ও মরহুমা সালেহা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। উপজেলার শত বছরের গৌরবোজ্জ্বল আদিয়াবাদ হাইস্কুল থেকে ১৯৭৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ফার্স্ট ডিভিশনে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭৫-৭৬ সেশনে ঢাকা কলেজে অধ্যায়ন এবং পরে ১৯৭৭ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে ফার্স্ট ক্লাশ পেয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। প্রথম জীবনে তিনি স্কুল-কলেজের ছাত্র ও গণিতের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৮১ সালে সৌদি বাদশাহ’র গৌরবময় শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে মক্কা শরীফের উম্মুলকুরা ইউনিভার্সিটিতে গমন করেন। সেখানে তিনি এরাবিক ল্যাংগুয়েজ ইনস্টিটিউট ও অনার্স কোর্সে বিভিন্ন দেশের স্কলারদের নিকট দীর্ঘ দশ বছরকাল আরবী ভাষা, নাহু-ছরফ, তাফসীরুল কুরআন, হাদীস ও ফিক্হ শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে সৌদি আরবের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও পবিত্র কাবা’র সম্মানিত ইমাম শাইখ ড. সালেহ বিন হুমাইদ ও কাবা’র আরেক সম্মানিত ইমাম ড. উমর আস্-সুবাইল রাহেমাহুল্লাহ অন্যতম। জনাব নূরুল ইসলাম দেশে ফিরে ১৯৯৬ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপনায় রত আছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগদানের জন্য তিনি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভারত, আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও মিশরসহ অনেক দেশ সফর করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে অদ্যাবধি টিভি-চ্যানেল ‘এটিএন বাংলা’র প্রভাতের দারসে হাদীস অনুষ্ঠানের তিনি একজন নিয়মিত আলোচক। তাঁর সহধর্মিণীর নাম আঁখিনূর বেগম (এমএ ইসলামিক স্টাডিজ)। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক। ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ২০টি। তন্মধ্যে উলেখযোগ্য হলো- (১) কুরআন কারীমের মর্মার্থ ও শব্দার্থ (ত্রিশতম পারা), (২) বিশুদ্ধ তিলাওয়াত পদ্ধতি, (৩) বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে ওযূ-গোসল, (৪) যেভাবে নামায পড়তেন রাসূলুলাহ [স] (৫) প্রশ্নোত্তরে জুমুআ ও খুৎবা, (৬) প্রশ্নোত্তরে যাকাত ও সদাকাহ, (৭) প্রশ্নোত্তরে রমযান ও ঈদ, (৮) প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা, (৯) উমরা কিভাবে করবেন?, (১০) প্রশ্নোত্তরে কুরবানী ও আকীকা, (১১) শুধু আলাহর কাছে চাই (দু‘আ-মুনাজাতের বই), (১২) উঁধ ইড়ড়শ রহ অৎধনর ইধহমষধ ঊহমষরংয, (১৩) আকীদা ও ফিক্হ (১ম থেকে ৫ম শ্রেণী), (১৪) চরিত্র গঠনের উপায়, (১৫) কবর কিয়ামাত আখিরাত।