লালন সাঁই (১৭৭৪-১৮৯০)-এর দেহত্যাগের পর পাক্ষিক ‘হিতকারী’ (৩১ অক্টোবর ১৮৯০) পত্রিকায় এক নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, “লালন ফকিরের অসংখ্য গান সৰ্ব্বত্রে গীত হইয়া থাকে। কিন্তু এই গানের সংখ্যা কতাে সে সম্পর্কে সঠিক কোনাে তথ্য মেলে না। লালনের শিষ্য-সম্প্রদায়ের ধারণা এই সংখ্যা কমপক্ষে দশ হাজার। অবশ্য এই অনুমতি সংখ্যা অতিরঞ্জিত বলেই মনে হয়। তবে লালন তাঁর দীর্ঘজীবনে এক-দুই হাজার গান রচনা করতে পারেন, তাতে বিস্ময়ের কোনাে কারণ নেই। এ-পর্যন্ত লালনের যে-সব পদ-সংগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে সব মিলিয়ে তার সংখ্যা ছ’শাের বেশি নয়। সংরক্ষণের অভাবে তাঁর অনেক গানই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু গান বাউল-ফকিরদের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে যা ইতােপূর্বে সংগৃহীত-সংকলিত হয়নি। হয়তাে লালনের শিষ্য-প্রশিষ্যদের লিপিকৃত খাতাতেও অপ্রকাশিত গান থাকতে পারে। লালনের শিষ্যধারার চতুর্থ সিঁড়ির সাধক ফকির আনােয়ার হােসেন (মন্টু শাহ) দীর্ঘকাল ধরে লালনের গান সংগ্রহে নিয়ােজিত আছেন। ইতােমধ্যে তিনি ‘লালন-সঙ্গীত' নামে দুই খন্ডে লালনের ছ'শােটি পদ সংকলিত করেছেন। এখন আবার দু'শাে গান নিয়ে তৃতীয় খন্ড প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। তিন খন্ড মিলে এখন। গান দাঁড়ালাে আটশাে-তে। লালনের সর্বোচ্চ সংখ্যক গানের সংকলনের মর্যাদা পাবে এই ‘লালন-সঙ্গীত’ বই। তবে একটি কথা বলা প্রয়ােজন যে, এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত কিছু গানের পদকর্তা লালন কিনা, সে সম্পর্কে সংশয় আছে। শুধু ভণিতা যুক্ত হলেই তা যে লালনের গান হবে এমন কথা নেই, ভাব-ভাষা-ছন্দের বিচারও প্রয়ােজন নতুন আবিষ্কৃত গানের ক্ষেত্রে। তবুও লালনের বিলুপ্ত-দুষ্প্রাপ্য-প্রচলিতি গান সংগ্রহ ও উদ্ধার করে একটি গীতি-সংকলন উপহার দেওয়ার জন্যে সংকলকসম্পাদক ফকির আনােয়ার হােসেন (মন্টু শাহ) নিঃসন্দেহে সকলের অভিনন্দন পাবেন। আলেক সাঁই।