তখন ছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষ সময়। যুদ্ধে অবিভক্ত ভারতে ঘটে গেছে এক মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষ। এ দুর্ভিক্ষই ইতিহাসের পাতায় তেতাল্লিশের মন্বন্তর হিসাবে স্থান লাভ করেছে। বেসরকারি হিসাব মতে এ দুর্ভিক্ষে অনাহারে প্রায় ৫০ লাখ লোক মারা গেছে। ক্ষুধার জ্বালা কতো কুলবধূ যে স্বামী ত্যাগ করেছে, কতো নারী যে সতীত্ব নষ্ট করেছে, কতো পরিবার যে ছিন্নমূল বাস্তহারা হয়েছে, তার সঠিক হিসাব ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। এমনি এক ভয়াবহ সময়ে ১৯৪৪ সালের ৭ এপ্রিল ময়মনসিংহ শহরের 'কাচিঝুলি' পাড়ায় আমার জন্ম। ওই সময় আমার মরহুম আব্বা ময়মনসিংহ শহরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আমি আজ এ ভেবে গর্ববোধ করি যে আমার এ ছোট্ট জীবনে আমি তিনটি ঐতিহাসিক সময় পার করেছি। এর প্রথম তিন বছর অর্থাৎ ১৯৪৪ সালের ৭ মার্চ থেকে ১৯৪৭ সালের ১৩ আগষ্ট পর্যন্ত আমি ছিলাম ইংরেজ রাজত্বের পরাধীন নাগরিক। এরপর তেইশ বছর অবিভক্ত পাকিস্তানের ধর্মীয় স্লোগানের আড়ালে ঔপনিবেশিক শাসনের দুর্বিসহ জীবনকাল। সর্বশেষে উনচল্লিশ বছর ধরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বুকে গৌরবান্বিত নাগরিক হিসাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি। কখনো ছাত্র হিসাবে, কখনো সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে।