তাসাওউফ ক্যায়া হ্যায় একটি যুগান্তকারী গ্রন্থ। এর সম্মানিত লেখকবৃন্দ―হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মনযূর নুমানী রহ., হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ওয়ায়েস নদভী রহ. এবং হযরত মাওলানা সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.―এ উপমহাদেশের এমন সব ইসলামী ব্যক্তিত্ব, যাদের নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাসাওউফ সম্পর্কে সঠিক তত্ত¡ ও তথ্য উপস্থাপন এবং একই সাথে সব ভ্রান্ত ধারণা নিরসনের জন্য যুগের পর যুগ এ গ্রন্থটি প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। অনেকে তাসাওউফ বা পীর-মুরীদীকে অবজ্ঞা করে থাকেন। তারা আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করলেও কোনো আল্লাহওয়ালার কাছে বাইআত হওয়াকে মেনে নিতে পারেন না। তারা বলে থাকেন, কুরআন-হাদীস থাকতে কেন আরেকজন মানুষের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে আত্মশুদ্ধি করতে হবে? শুরুতে ঠিক একই ধারণা লালন করতেন এ গ্রন্থের অন্যতম লেখক হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মনযূর নুমানী রহ.। তারপর তিনি এক দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় তাসাওউফ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এ গ্রন্থে তিনি সেই ঘটনাই ব্যক্ত করেছেন; যা আধুনিক মুসলিমদের চিন্তা-জগতে তাসাওউফ সম্পর্কে নতুন দিক উন্মোচিত করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। যারা তাসাওউফ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী, তাদের জন্যও এটি আলোর দিশা হয়ে থাকবে। ইনশাআল্লাহ, সকল পাঠক এ গ্রন্থ থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন।
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।