জেমস জয়েসকে অনুবাদ করা বিশেষত সেই ভাষায়, যার সঙ্গে গ্রিক মিথোলজি এবং ইংরেজি কলোকুয়েলসের দূরত্ব সাত-সমুদ্র তেরো-নদীর চেয়েও বেশি সর্বার্থেই এক দুঃস্বপ্ন। উপরন্তু আমি আচারে বিহারে পুরোপুরি বাঙাল; না আছে সাহেবি ভাষার সুঠাম জোর, না আছে বিলাতে দু'দশ মাস থাকার অভিজ্ঞতা। সুতরাং সবিনয়ে স্বীকার করি, এ- বই কোনোভাবেই অনুবাদ নয়। ভাষান্তর খানিকটা বলা গেলেও, রূপান্তর বলাই শ্রেয়। তবে এই বিনয়কে কেউ আবার মেটামরফোসিস ভেবে নেবেন না, বরং এ-সেই টলস্টয়ের 'আরব্য উপন্যাস' পড়ার নিয়তে আরবি ভাষায় ভর্তি-হওয়া-অন্তিমে যার 'ডিপ্লোমা' কিংবা 'রজনী-পাঠ'-কোনোটাই হয়নি; হয়তো তেমনি। কারণ স্টিফেন সেই দুরন্ত নায়ক-যে স্পার্টাকাস না হয়েও বিদ্রোহী; প্রমিথিউস না হয়েও প্রদীপ-সঞ্চালক। বিনয়ী অথচ প্রথা-ধর্ম পরিত্যাগে বদ্ধপরিকর এবং দেশপ্রেম প্রমাণ করতে ক্ষমাহীন প্রত্যাখ্যানে স্বদেশকেই টা-টা জানাতে সক্ষম এই ছেলের চরিত্র দেবদাসে শতবর্ষ- নিমজ্জিত এঁটেল-মাটির দেশের পাঠকের জন্য একদিকে যেমন বেখাপ্পা, অন্যদিকে যাতনাদায়কও বটে। তবে এ-শুধু গান্ধী-রবীন্দ্রনাথের দেশেরই পাঠক-নিয়তি নয়, জেমস জয়েসকে জীবদ্দশায় প্রত্যাখ্যান করেছে পুরো ইয়োরোপ এবং মার্কিনিরা পর্যন্ত। কারণ কী? কারণ এর নায়ক ডিডেলাস যে বিপ্লবী-জেহাদি হয়েও বেছে নেয় শান্তি ও সৌহার্দ্রের পথ-অর্থাৎ শিল্পীর জীবন। তাই কাজী নজরুল হয়েও শিকার হননি মামলা- মোকদ্দমার কারণ সেটা 'সুসভ্য' পাশ্চাত্য-যদিও সেন্সরশিপ ও প্রতিরোধ ছিল
James Joyce- (১৮৮২-১৯৪১) জন্ম নেন ডাবলিন-এ। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম একজন বিশিষ্ট ও প্রভাবশালী লেখক। আধুনিকতাবাদী আভাঁ-গার্ড আন্দোলনের মুখ্য রূপকারও। শিক্ষালাভ করে জেসুইট স্কুল ও ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ে। Ulysses তাঁর অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। তাঁর অন্য কয়টি উল্লেখযোগ্য রচনা : ছোটগল্প সংগ্রহ Dubliners (১৯১৪) এবং উপন্যাস A Portrait of the Artist as a Young Man (১৯১৬) ও Finnegans Wake (১৯৩৯)। অনুবাদক : জাকারিয়া শিরাজী (১৯৪১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স (১৯৬৪)। তিনি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই লেখেন। তাঁর অনুবাদ, প্রবন্ধ ও সমালোচনা বিষয়ক বইপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বর্তমানে ডেইলি সান পত্রিকায় উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত।