ফ্ল্যাপে লিখা কথা যে-কোনো বিষয় নিয়ে গবেষণা হতে পারি বহুমাত্রিক-কাজী নজরুল ইসলামের মত বহমুখী প্রতিভাবান কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে তো বটেই। বাংলাদেশে নজরুলকে নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি-উদ্যোগে, সন্তোষজনক না হলেও, বেশ বই পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গবেষণাগ্রন্থও কম বেরোয়ণি। কিন্তু নজরুলকে নিয়ে মানবর্দ্ধন পালের এ বই সম্পূর্ণই অন্যরকম কবির জীবন ও কর্ম বিষয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচক।
সুস্থাবস্থায় নজরুল তাঁর সাতাশাটি বই ব্যক্তিক বা নৈর্ব্যক্তিকভাবে উৎসর্গ করেছিলেন। সমকালের যে সকল খ্যাতিমান ব্যক্তিদের কবি বই উৎসর্গ করেছেন তাঁরা কেউ রাজনীতিক , কেউ স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কেউ সশস্ত্র বিপ্লবী, কেউ জননীতুল্যম কেউ বন্ধু-সখা-প্রিয়জন, কেউ কবি-লেখক-গায়ক, আবার কেউ বা প্রতিভাজন। আর নৈর্ব্যক্তিক বা সর্বজনীনভাবে যে সব বই উৎসর্গ করেছেন তাতে ব্যক্তিমান না-থাকলেও আছে প্রিয় মানুষের ছায়া-প্রচ্ছায়া কিংবা কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের কৃতি।
লেখক কর্তৃক কোনো বই যে ভাবেই উৎসর্গ করা হোকি-ব্যক্তিনামে বা সর্বজনীনভাবে তার মর্মবাণীর নেপথ্যে থাকে উৎসর্গিতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক; শ্রদ্ধা-স্নেহ-ভালোবাসা এবং আন্তরিক যোগসূত্র। তাই নজরুল যাঁদের বই উৎসর্গ করেছেন তাঁর কারা-কী তাঁদের পরিচয়, কীভাবে পরিচয়, এবং কবির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের গভীরতা কতখানি এ সব বিষয় আশয় লেখক এ গ্রন্থে উদ্ঘাটন এবং মূল্যায়ন করেছেন। নজরুল জীবনের সঙ্গে জড়িত অল্প জানা এবং অনেক অজানা ব্যক্তিদের পরিচয় ও কৃতির বিবরণে ঋদ্ধ। এ বই ‘গ্রন্থোৎসর্গে নজরুলমানস’। তথ্যে, বর্ণনায় এবং বিশ্লেষণে মানবর্দ্ধন পালের এ বই , সন্দেহ নেই, এদেশে নজরুল গবেষণায় নতুন মাত্রা সংযোজন এবং অন্যতর দিগন্ত উন্মোচন করেছে।