সাওল সম্পর্কে ধারণা: 'সাওল' ভারতের রাজস্থানী শব্দ। এর অর্থ কোনো কাজ যথাসাধ্য উত্তমরূপে সাধন করা। ইংরেজি Science And Art Of Living শব্দগুচ্ছের প্রথম অক্ষর নিয়ে সাওল- SAAOL কথাটি তৈরি হয়েছে। শরীরের কোনো অংশে খোঁচাখুঁচি বা হৃদযন্ত্রের কোনো প্রকার কাটাছেঁড়া না করে তার চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবনে সাওলই পুরোধা। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাথে সুন্দর জীবন-যাপনের একটি বিজ্ঞানসম্মত সমন্বয় ঘটিয়েছে সাওল। এ সমন্বয়কে এমনভাবে বিন্যাস করা হয়েছে যাতে সবাই তা অনুশীলন করতে পারেন। আধুনিক এলোপ্যাথিক ওষুধের সাথে প্রাচীন কালের যোগব্যায়াম এবং মানসিক চাপ বা উত্তেজনা প্রশমনের উপায়কে সাওল একত্রিত করেছে। এ সমন্বয় এতই সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে যে, এ পদ্ধতি করোনারি হার্ট ডিজিজকে কেবল প্রতিরোধই করে না, হার্টের ব্লকেজকে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনে এবং পরিশেষে ব্লকেজ রিভার্স হয়ে যায়। সাওলের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে, সকলকে স্বাধীনভাবে এ মর্মে উদ্বুদ্ধ করা যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের কাজকর্ম নির্ধারণ করতে পারেন, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো কমিয়ে আনতে পারেন। বাস্তব ক্ষেত্রে সাওল যা দিতে চায় তা এ রকম-
ডা. বিমল ছাজেড় উপমহাদেশের চিকিৎসাজগতে একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারতে নন-ইনভেসিভ কার্ডিওলােজি ও বিনা অপারেশনে হৃদরােগ চিকিৎসাপদ্ধতির প্রবর্তক। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ১৯৬১ সালে এক জৈনধর্ম পরিবারে তাঁর জন্ম। কলকাতা সেন্ট লরেন্স হাইস্কুলে পড়াশােনা শেষে ১৯৮৬ সালে কলকাতার আরজি কার মাইকেল মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ২৫ বছর বয়সে নয়াদিল্লির ডা. রাম মনােহর লেহিয়া হাসপাতালের হৃদরােগ বিভাগে কাজ শুরু করেন। সেখানে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা তাঁর জীবন-উপলব্ধি পরিবর্তন করে দেয়। ফলে হৃদরােগ চিকিৎসার বিষয়ে তাঁর ধ্যান-ধারণা নতুন মােড় নেয়। তিনি লখনৌ কিং জর্জ মেডিকেল কলেজ থেকে এমডি ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন এবং সেখানে অপারেশন ছাড়া হৃদরােগীদের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করেন। এমডি করার পর অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস AIIMS এ সিনিয়র রেসিডেন্ট এবং সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ৬ বছর কাজ করেন। তিনি যােগব্যায়াম পদ্ধতির ওপরও প্রশিক্ষণ নেন। AIIMS-এ তার গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, করােনারি হার্ট ডিজিজ বা হার্ট ব্লকেজ শুধু প্রতিরােধই হয় না, তা বিলােপ করে রােগীকে নিরােগ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়া আমেরিকার নন-ইনভেসিভ কার্ডিওলােজির অগ্রদূত ডা. ডিন অরনিশের নিকট প্রশিক্ষণকালেও ডা. বিমল ছাজেড় প্রমাণ করেন যে, জীবন-যাপন পদ্ধতির মাধ্যমে হৃদরােগ থেকে সুস্থতা লাভ সম্ভব। ১৯৯৫ সালে ডা. বিমল ছাজেড় AIIMS থেকে পদত্যাগ করে সাওল Science And Art Of Living-SAAOL বা আধুনিক মেশিন-মেডিসিন, আদর্শ জীবন-যাপন ও পরিকল্পিত খাদ্য-অভ্যাস সমন্বিত এক নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবন করে হৃদরােগীদের চিকিৎসা প্রদান শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে ডা. বিমল ছাজেড় দিল্লীতে তাঁর সাওল হার্ট সেন্টার ক্লিনিক উদ্বোধন করেন। পরে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশসহ বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানে ৩২টি শাখা স্থাপন করেন । এ সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। সাওল হার্ট সেন্টারের প্রধান কার্যালয় দক্ষিণ দিল্লির লাজপাত নগরের বিক্রম বিহারে অবস্থিত। ডা. বিমল ছাজেড় উদ্ভাবিত সাওল হার্ট প্রােগ্রাম বিনা অপারেশনে হৃদরােগ মুক্তির চিকিৎসাপদ্ধতি হিসেবে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। এ পদ্ধতিতে এলােপ্যাথিক চিকিৎসার সঙ্গে চিকিৎসা-জ্ঞান, তেলছাড়া রান্না, মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা, যােগব্যায়াম ও মেডিটেশনের সম্মিলিত পদ্ধতিতে রােগীকে স্থায়ীভাবে সুস্থ করে তােলা হয়। ডা. ছাজেড় হৃদরােগীর জন্য শতাধিক বই লিখেছেন। এছাড়া ভিসিডি আকারে তার অনেক লেকচার পাওয়া যায়। তিনি প্রতিকারমূলক কার্ডিওলজির একজন চমৎকার শিক্ষক। তাঁর পরিচালনায় হৃদরােগ চিকিৎসা বিষয়ক সাওল টাইম' নামে একটি দ্বিমাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ডা. বিমল ছাজেড় ৮০ হাজারেরও অধিক রােগীর চিকিৎসা করেছেন এবং হার্ট অ্যাটাক, বাইপাস সার্জারি ও এনজিওপ্লাস্টি থেকে মুক্ত থাকার জন্য রােগীদের সাহায্য করেছেন। ভারতের প্রাক্তন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শ্রী শংকর দয়ালজী শর্মা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান শ্রী প্রতিভা ডি পাতিল এবং তাঁর স্বামী ডা. বিমল ছাজেড়ের কাছ থেকে সাওল চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।