তাফসীরুল কুরআনিল আযীম বা তাফসীরে ইবনে কাসীর হল কালজয়ী তাফসীর। যা যুগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ । বিশ্বের সকল আলিম ওলামা এর খ্যাতি মেনে নিয়েছেন।এটি লেখার সময় হতে আজ পর্যন্ত রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করে সকল বিশ্ববিদ্যালয়। এটির ব্যাখ্যাকার হলেন কালজয়ী মুহাদ্দিস মুফাসসির যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী আল্লামা ইমাম আবুল ফিদা ইসমাইল ইবনে কাসীর। ইলেমে তাফসীর জগতে এ এক অবিস্মরণীয় কীর্তি এতে সন্দেহ সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। তাফসীরে ইবনে কাসীর কে উম্মুত তাফসীর ও বলা হয়। এ তাফসীর সম্পর্কে আল্লাম সুয়ুতী রহ বলেন- এই ধরনের তাফসীর আজ পর্যন্ত অন্য কেহ লিখতে পারে নাই । রিয়াওয়াত ভিত্তিক এই তাফসীর সর্বাধিক উপকারী। তাফসীর ইবনে কাছীরের মূল বিশিষ্ট হল কুরআনের তাফসীর করতে কুরআনের ব্যাবহার করা হয়েছে , তারপর হাদীস এনেছে , তার পড় সাহাবীদের আছার, তারপর তাবেয়ীদের বক্তব্য এনেছেন। হাদীস বলার ক্ষেত্রে হাদীসের মান তুলে ধরেছেন। এতে ফিকহি মাসালা নিয়ে আলোচনা করা হয়ছে ।মূল তাফসীর আরবী ভাষায় চার খণ্ডে । দেশের প্রকাশনা জগতে এক পরিচিত নাম আল কোরআন একাডেমী পাবলিকেশন্স এই তাফসীরটি অনুবাদ করেছেন। যারা দীর্ঘ দিন পর্যন্ত এই তাফসীরটি পড়ার অপেক্ষা করেছেন তাদের জন্য এক বিরল প্রকাশনা। আল কুরআন এর সঠিক শিক্ষা অর্জন করতে এই তাফসীরটির বিকল্প নেই ।কুরআনী তাফসীর জগতে এ এক বিরল অবদান।
আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর জন্ম ১৩০১ খ্রিস্টাব্দে বসরার (বর্তমান সিরিয়া) মামলুক সালতানাতে। তার পুরো নাম ইসমাঈল ইবন উমর ইবন কাসীর ইবন দূ ইবন কাসীর ইবন দিরা আল-কুরায়শী হলেও তিনি ইবনে কাছীর নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি কুরায়েশ বংশের বনী হাসালা গোত্রের সন্তান। তার জন্মস্থান এবং জন্ম তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তার শিক্ষাজীবন এবং শৈশব নিয়েও খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে মামলুক সালতানাতেই তিনি বড় হয়েছেন, এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণ নিশ্চিত। কৈশোরে তিনি ফিরিঙ্গীদের যুদ্ধ, ক্রুসেড, তাতারদের আক্রমণ, শাসকদের অন্তর্কোন্দল, বিদ্রোহ করে ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস, দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানির মতো যাবতীয় দুর্যোগ আর দুর্দশা দেখে দেখে বড় হয়েছেন। কর্মজীবনে ইবনে কাছীর রহ. উন্মুসসা’ ওয়াত তানাকুরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। কুরআন, হাদিস, তাফসির, ইতিহাস, গণিত সহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তিনি বিচরণ করেন। শায়খ তকী উদ্দী (রহঃ), উস্তাদ হাজরী (রহঃ), ইবনুল কালানসী (রহঃ) প্রমুখ প্রবাদত্যুল্য শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে নিজের জ্ঞানের আলোয় তিনি আলোকিত করেছিলেন মধ্যযুগীয় মুসলিম জ্ঞানপিপাসুদের। ১৩৭৩ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে তার মৃত্যু হয়। আল্লামা ইব্নে কাছীর রহ. এর বই সমূহ ইসলামি দর্শন, ফিকহ শাস্ত্র, তাফসির ও ইতিহাস নির্ভর। তার রচিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’-এর জন্য তিনি বিশ্বজোড়া সমাদৃত। পবিত্র কুরআনের কাছীরগুলোর মাঝে তার এই গ্রন্থটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এবং প্রামাণ্য। ১১ খণ্ডে প্রকাশিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’, ‘কাসাসুল আম্বিয়া’, ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’, ‘কিতাবুল আহকাম’ সহ বেশ কিছু জ্ঞানগর্ভ বই রয়েছে আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর বই সমগ্রতে।