শ্রীখগেন্দ্রনাথ মিত্র (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব রামতনু অধ্যাপক) : সমালোচনা গ্রন্থ সচরাচর যে ভাবে লিখিত হয়, এখানি ঠিক সে ভাবে লেখা নয়। লেখক এই সমালোচনা গ্রন্থে কেবল তাঁহার বিশ্লেষণী শক্তিরই পরিচয় দেন নাই; তিনি দেশবিদেশের সাহিত্যানুশীলনসঞ্চিত প্রকৃত কাব্যরসানুভূতিরও পরিচয় দিয়াছেন। গয়টে, বার্নাড শ, ইবসেন, শেলী, কীট্স, ওয়ার্ডসওয়ার্থ প্রভৃতি কবির সঙ্গে তুলনামূলক সমালোচনা করিয়া তিনি রবীন্দ্রনাথের কাব্যবোধে সহায়তা করিয়াছেন। বস্তুতঃ বিদেশীয় কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যে রস নিবিড় যোগাযোগ ছিল, তাহা না বুঝিলে এই অসামান্য প্রতিভাসম্পন্ন কবিশ্রেষ্ঠের অনেকাংশই দুৰ্বেদ্ধা থাকিয়া যায়। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর : এইখানি বহু গবেষণা, বহু খুঁটিনাটি তথ্য ও গভীর সাহিত্যরসালোচনায় মনোরম হয়ে উঠেছে ; পাঠকেরা এর থেকে অনেক তথ্য ও তত্ত্ব পাবেন রবীন্দ্রনাথের কাব্য বিষয়ে। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় : রবীন্দ্রনাথের ভাব, আদর্শ ও তাৎপর্য অপূর্ব সূক্ষ্মদর্শিতার সহিত আলোচিত হইয়াছে। লেখক রবীন্দ্রকাব্য-রচনাবলীর সমালোচনা সর্বপ্রথম নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর স্থাপন করিয়াছেন। গোপাল হালদার (ইংগিত) : এত বিশদ করে ও যত্ন করে রবীন্দ্র সমালোচনায় অন্যান্য অনেকেই ব্রতী হন নি, তা স্বীকার করতে হবে। এ গ্রন্থ থেকে রবীন্দ্রকাব্য পাঠে যথেষ্ট আলোক লাভ করা যায়, প্রত্যেকটি কাব্যগ্রন্থ ও প্রত্যেকটি কবিতার অর্থবোধ ও তাৎপর্য-বোধ সুসম্ভব হয় । সজনীকান্ত দাস : (শনিবারের চিঠি) বহুস্থলে লেখকের নূতন দৃষ্টিভঙ্গী আমাদের চিন্তার খোরাক যোগাইয়াছে। এই পরিক্রমার ফলে রবীন্দ্রনাথের সমগ্র কাব্যজীবন একটি সুপরিস্ফুট রূপ লইয়াছে।' আনন্দবাজার পত্রিকা : গ্রন্থের প্রারম্ভে 'রবীন্দ্র-কাব্যের স্বরূপ' নির্ণয়ে গ্রন্থকার প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলির যে সুদীর্ঘ আলোচনা করিয়াছেন, তাহাতে তাঁহার অসাধারণ মননশীলতা, সাহিত্য রসানুভূতি, গভীর অন্তদৃষ্টি ও দ্য বিচারনৈপুণ্যের যথেষ্ট প্রমাণ বর্তমান। শেলী, কীট্স, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, ব্রাউনিং, গ্যেটে, ভিক্টর হুগো, ইবসেন, বার্নাড শ' প্রভৃতির সহিত লেখক রবীন্দ্রনাথের যে তুলনামূলক সমালোচনা করিয়াছেন, তাহাতে তাহার ইউরোপীয় সাহিত্য সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান ও চিন্তাশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। যুগান্তর : রবীন্দ্রসাহিত্যের অন্যতম সমালোচক হিসাবে গ্রন্থকার সুপরিচিত। গ্রন্থকার কালানুক্রমিকভাবে সমগ্র কাব্যগ্রন্থের আলোচনা করিয়াছেন।...এই বিপুলকলেবর গ্রন্থে বিবিধ তথ্য, সাহিত্যের ইতিহাস, নানা বিচার বিতর্ক এবং গভীর ও সূক্ষ্ম রসবিশ্লেষণের সমাবেশ আছে, কিন্তু ভাষা কোথাও বিন্দুমাত্র জটিল ও রসহীন হয় নাই এবং প্রকাশভঙ্গী সুন্দর, স্বচ্ছ ও সাবলীল গতিলাভ করিয়াছে। লেখকের কাব্যরসানুভূতির একটা আনন্দ যেন গ্রন্থের সর্বত্র বিশেষ করিয়া ব্যাখ্যাগুলির মধ্যে পরিব্যাপ্ত হইয়া আছে, তাহা সহজেই পাঠকের মনে সংক্রামিত হয়। দেশ : উপেন্দ্রনাথ কেবল রবীন্দ্র-কাব্যের ব্যাখ্যা করেন নি, তিনি রবীন্দ্রনাথকে বিশ্লেষণ করে তাঁর মর্ম উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করেছেন। রবীন্দ্রকাব্যরূপ মহীরূহটি বাংলার কোন্ মৃত্তিকায় স্নেহ লাভ করেছিল, রবীন্দ্রকাব্য-উপলব্ধিতে এ কথা জানা আবশ্যক। লেখক নিপুণ সমালোচক, তাই তিনি তাঁর সমালোচক দৃষ্টিকে সেইজন্য প্রথমে মূলে নিবন্ধ করেছেন।... তিনি ব্রাউনিং, শেলী, কীট্স, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, গ্যেটে, ইবসেন ইত্যাদি সাহিত্যিকবর্গের সাহিত্যসৃষ্টি ও চিন্তাধারার সঙ্গে রবীন্দ্রসাহিত্যের ও রবীন্দ্রচিন্তার তুলনা করেছেন। এতে রবীন্দ্রনাথকে চিনতে ও বুঝতে সুবিধা হয়েছে অনেক। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি—বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে তাই এই তুলনা সমীচীনই হয়েছে।