যে-জাতির সভ্যতা যত প্রাচীন, তার মানসিক দাসত্বের বন্ধনও ততই বেশি। ভারতের সভ্যতা সুপ্রাচীন, এবং এই প্রাচীনতা সম্পর্কে সন্দেহের কোনাে অবকাশ নেই। আর তাই এই সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে যে-পথ, সে-পথেও রয়েছে অনেক প্রতিবন্ধকতা। মানসিক দাসত্ব প্রগতির পথে সবচেয়ে বড়াে বাধা। আমাদের দুঃখ-কষ্ট, আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সমস্যা এত বেশি এবং এত জটিল যে, অত্যন্ত মুক্ত মনে সে-সমস্যাগুলি নিয়ে যদি আমরা চিন্তা-ভাবনা না করি, তাহলে এই সমস্যাগুলিকে অতিক্রমের পথও আমরা খুঁজে পাব না। বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ভারতে জাতীয়তার জোয়ার আসে, বিশেষ করে তরুণ শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে। এ-জাতীয়তাবােধ অনেকাংশে প্রশংসনীয় হলেও, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে অন্ধ জাতীয়তাবােধও ছিল। সত্যি-মিথ্যে—যেভাবেই হােক না কেন, তারা দেশের ইতিহাসকে সবচেয়ে সাচ্চা এবং গৌরবময় প্রমাণিত করার জন্যে, অর্থাৎ তাদের মুনি-ঋষি, লেখক, চিন্তাবিদ, রাজারাজরা এবং রাজনৈতিক সংস্থাগুলির মধ্যে বিংশ শতাব্দীর নানা উল্লেখযােগ্য ও মহত্ত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুগুলিকে প্রত্যক্ষ করা ছিল তাদের জাতীয়তাবােধের এক অঙ্গ।.....
তাঁর জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে সনাতন হিন্দু ভূমিহার ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মস্থান উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি ছোট্ট গ্রাম। তাঁর আসল নাম ছিল কেদারনাথ পাণ্ডে। ছোটোবেলাতেই তিনি মাকে হারান। তাঁর পিতা গোবর্ধন পান্ডে ছিলেন একজন কৃষক। বাল্য কালে তিনি একটি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। আর এটিই ছিলো তাঁর জীবনে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অষ্টম শ্রেণী অবধি অধ্যয়ন করেছিলেন। এখানে তিনি উর্দু ও সংস্কৃতের উপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বহু ভাষায় শিক্ষা করেছিলেন যথা : হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ।
পুরস্কার তালিকা পদ্মভূষণ (১৯৬৩) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৮)
ব্যক্তিগত জীবন জালিওয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ড (১৯১৯) তাঁকে একজন শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী কর্মীতে রূপান্তরিত করে। এ সময় ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে আটক করা হয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এ সময়টিতে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহল ভাষা শিখে তিনি মূল বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা আকৃষ্ট হন এবং নিজ নাম পরিবর্তন করে রাখেন রাহুল (বুদ্ধের পুত্রের নামানুসারে) সাংকৃত্যায়ন (আত্তীকরণ করে যে)।, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিহারে চলে যান এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর সাথে কাজ করা শুরু করেন। তিনি গান্ধিজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং এসময় তিনি গান্ধীজী প্রণীত কর্মসূচীতে যোগদান করেন। যদিও তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না, তবুও তার অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য রাশিয়ায় থাকাকালীন লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে শিক্ষকতার অনুরোধ করা হয়। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতে এসে তিনি ডঃ কমলা নামক একজন ভারতীয় নেপালি মহিলা কে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান হয়, কন্যা জয়া ও পুত্র জিৎ। পরে শ্রীলংকায় (তৎকালীন সিংহল) বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দার্জিলিংয়ে, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।