বইয়ের ভূমিকা রাশেদুর রহমান সম্পাদিত নারী ১৯৭১ : নির্যাতিত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার বইটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি খণ্ড-ইতিহাস। যদিও এর গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের বেশির ভাগ মুক্তিসংগ্রামে কোনো-না-কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২ লাখ নারী। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের ভেতরে নির্বিচারে গণহত্যা ঘটেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী স্থানীয় রাজাকার- আলবদরদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের শহর-গ্রামনির্বিশেষে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সব বয়সের লাখ লাখ বাঙালি নারী-পুরুষের ওপর সশস্ত্র হামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে। সেই অগ্নিগর্ভ সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার ৪৭ জন কিশোরী, তরুণী, প্রৌঢ়া এমনকি প্রবীণা, অবিবাহিত ও বিবাহিত নারী, কীভাবে তাঁদের ক্ষতবিক্ষত জীবন পার করেছেন, তারই রক্তাক্ত বিবরণ তাঁদের নিজের ভাষায়, সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তুলে ধরা হয়েছে এ বইয়ের মাধ্যমে। বর্বরতার শিকার এই নারীদের কয়েকজন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন ১৪ জন, এসএসসি থেকে বিএ পাস নারীর সংখ্যা ১২। এমএ পাস দুইজন। ‘বীর প্রতীক' খেতাবে ভূষিত একজন এমবিবিএস ডাক্তার। অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যও নেই। এঁদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক শ্রমজীবী, নার্স, সমাজসেবী, গৃহকর্মী, চাকরিজীবী; অধিকাংশই গৃহিণী। বয়স, শিক্ষা ও পেশার পার্থক্য সত্ত্বেও তাঁদের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর অভিজ্ঞতার বিবরণের মধ্যে আমরা শুনতে পাই এক এবং অভিন্ন প্রতিবাদ-প্রতিরোধের শব্দধ্বনি। শুধু 'নারীদের বয়ান' বলে প্রচলিত সামাজিকীকরণের বলয়ে এই বিবরণগুলোকে ছকবদ্ধ করা যায় না ।