এই গল্পগ্রন্থে দুটি গল্প আছে। প্রথমটি ফুলেশ্বরী, দ্বিতীয়টি উদাসী কাঠালি রঙ। ফুলেশ্বরী লিখতে গিয়ে বেশি জটিল কিছু ভাবতে চাইনি। মানব মস্তিকের একটা অংশ জুড়ে প্রেম ভালবাসার লুকোচুরি খেলা চলে। কোথাও চলে বিপরীত ধারা। প্রেম মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পথ চলতে মানুষের সাথে ওঠবােস করতে অনেক বৈচিত্র্যময় সম্পর্ক চোখে পড়ে। ফুলেশ্বরী গল্প রূপকথার মত অমূলক গল্প নয়। এমন জীবনমুখরিত সম্পর্ক এবং আবেগের মিশেলে চলছে মানষের জীবন। অনেকে মনের আবেগটুকু ভাষায় তুলে আনতে পারে না। তারা মনের জমিনের চাষাবাদ করে চলে প্রেম ভালবাসা। প্রেমের কলুষতায় আমার বিশ্বাস নেই। ভালবাসা সার্বজনীন ব্যাপার। আমরা মানুষরা প্রেম ভালবাসার সংজ্ঞা বিকৃত করে ফেলি ও কদাকার একটি পর্যায়ে ফেলে দিই। কিন্তু চোখ ও মনের সৌন্দর্য পরিচর্যা করলে এমন হৃদয়গ্রাহী সম্পর্ক কখনও ঠুনকো মনে হয় না। দ্বিতীয় গল্প উদাসী কাঁঠালি রঙ, একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তার কিছু ধর্মীয় উদ্ভট মনােভাব পােষণ, এক পতিতার মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে তার চরম আপত্তি। তবুও জীবন চলতে থাকে। মেয়েটি প্রতিবাদী স্বভাবের বলে স্বাধীনতা বিরােধী রাজাকার শ্বশুরের খুব পছন্দের হয়ে ওঠে। কিন্তু ছােটখাটো অসামঞ্জতা দেখলেও নিগার নামের পুত্রবধুটি প্রতিবাদ করে তার নিজস্ব ভাষায়। আমাদের সমাজের নিপীড়িত মেয়েরা আস্তে আস্তে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার নারীরা এখন দেখছে যে, পটভূমি বদলেছে। মুখটাকে একটু খুলতে হবে। ধমকের ও রক্তচক্ষুর পাল্টা জবাব দিতে হবে। আমাদের সমাজের নারীদের উন্নতি হচ্ছে। সত্যিই এটা বেশ আনন্দের কারণ আমার কাছে।
মিলি সুলতানার লেখায় শিল্প সাহিত্যের ঐতিহ্য কৃষ্টি ও সভ্যতার শেকড়ের গন্ধ পাওয়া যায়। সন্দেহ নেই তিনি তার সহজাত ও সাবলীল লেখনীর মাধ্যমে একটি নিজস্ব ধারা তৈরি করেছেন। লেখিকা সমানতালে গল্প উপন্যাস কবিতায় সুনিপুণতার ছাপ রেখেছেন। যা দেখে পরিলক্ষিত হয়, তার ক্ষুরধার লেখা আগামী দিনগুলোতে তাকে সুসাহিত্যিকের পর্যায়ে নিয়ে যাবে। তার গল্পের ভাঁজে ভাঁজে থাকে নাটকীয়তা। যা লেখিকার কাব্যরস বা সাহিত্যের ধারাকে ক্ষুন্ন করে না। কখনও তার লেখায় প্রকাশ পায় গভীর মমত্ব, কখনও তীব্র ঘূণাসহ প্রতিবাদ। কখনও জীবনের খোলামেলা দিক উঠে আসে। একজন লেখকের কলমে বহুমাত্রিকতা থাকবে- এটাই নিয়ম। লেখক নির্দিষ্ট ফ্রেমবন্দি হতে পারেন না। তিনি একজন সুলেখক ও শব্দ চৈতন্যের কারিগর। নব্বইয়ের আতপ্ৰকাশ। এসএসসি করেছেন আগ্রাবাদ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবং চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। মিলি সুলতানার জন্মস্থান কুমিল্লা। জন্ম ১১ই মে বৃষ রাশির জাতিকা। বর্তমানে আমেরিকায় স্বামী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন। সাহিত্যের ভাণ্ডারকে শিল্প সুষমায় ভরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে দিন দিন তার পারঙ্গমতা প্রমাণিত হচ্ছে। সাহিত্যচর্চার আরেক দিক হচ্ছে সহমর্মিতার ভাইরাস। মিলি সুলতানা তার লেখার ভাইরাস পাঠকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার লেখার প্রতিক্রিয়া তারই প্রমাণ বহন করে। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে আছে অন্ধকারের হায়েনা, মধুরিমা, রইব তোমার সাথে, অন্তরে আছ তুমি, যুদ্ধশিশু, খুঁজে পাবেনা নীল সীমানা, ওগো সুকন্যা, কোয়েলের মধুপূর্ণিমা, অলৌকিক ক্ষুধা, দেহকর, স্বপ্নের মল্লিকা ইত্যাদি। কিছু লেখা নিজের চেতনা থেকে লিখতে হয়। একজন লেখকের অন্তদৃষ্টি পতিত হয় মানুষের জীবনের প্রতি। জীবনকে কেটে কেটে তুলে আনতে হয়। জীবনবোধের গুঢ় রহস্যকে অনুধাবন করে তুলে এনে সার্থক গল্প উপন্যাসে রূপ দিয়েছেন লেখিকা। নিজের ইমপালস থেকে ওই লেখা বেরিয়ে আসে এটা মিলি সুলতানা প্রমাণ করেছেন।