লেখকদের থেকে সমাজ অনেককিছু দাবি করে। এ গ্রন্থে এই দাবিকেই বলা হয়েছে লেখকদের কাছে কালের দাবি। আবার সমাজ থেকেও লেখকেরা তাঁদের লেখা নিয়ে অনেককিছু আশা করেন। এই দাবি ও আশা পূরণের মধ্যদিয়েই সৃষ্টি হয় মহৎ সাহিত্য। বাংলাভাষায় আবুল কাসেম ফজলুল হক কালজয়ী মহান লেখকদের আত্মপ্রকাশ আশা করেন। যুদ্ধোত্তর বাস্তবতায় এই বোধ নিয়েই এ বইয়ের প্রবন্ধগুলো রচিত। প্রবন্ধ সাহিত্য নিয়ে রচিত হলেও এই লেখাগুলোতে রয়েছে এদেশের একটা সময়ের সার্বিক সাহিত্য-পরিস্থিতিরও অন্তর্গত পরিচয়। লেখক জাতীয় জীবনের ভালো-মন্দকে জাতির কর্মফলরূপে উপলব্ধি করেন। লেখকের মতে, কর্মফল তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকে রাজনীতিবিদদের ও লেখকদের। পাকিস্তানকালে এদেশের লেখকেরা জাতির জন্য কী নিয়তি তৈরি করেছিলেন, তার বিবরণ লেখক অসঙ্কোচে, নিঃশঙ্কচিত্তে বর্ণনা করেছেন। বাংলাদেশের জন্য উন্নততর ভবিষ্যত লেখকের লক্ষ্য। তাঁর মতে জাতির জীবনে বিনোদনমূলক সাহিত্যের চেয়ে প্রগতিমূলক সাহিত্যের মূল্য অনেক বেশি। এ-বইতে কয়েকজন প্রভাবশালী প্রবন্ধ-লেখকের অবদানের মূল্যবিচার করা হয়েছে। পাকিস্তানকালের ও বাংলাদেশের প্রথম কয়েক বছরের প্রবন্ধ সাহিত্য ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা নিয়ে এই আলোচনা বাংলাদেশের ভবিষ্যত সম্ভাবনা সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন জাগায়।
Abul Kashem Fozlul Haque আবুল কাসেম ফজলুল হক ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর গোটা পেশাজীবন কাটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে গবেষণা ও শিক্ষকতায়। ২০১১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। তখন তাঁর লেখার বিষয়বস্তু ছিল সৌন্দর্য, প্রেম, প্রকৃতি ও জীবনদর্শনের অনুসন্ধিৎসা। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে তিনি ১৯৬০-এর দশকে ছাত্র-আন্দোলনের প্রগতিশীল ধারায় সক্রিয় ছিলেন। সংস্কৃতি সংসদ, সুকান্ত একাডেমি, উন্মেষ, বাংলাদেশ লেখক শিবির, স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ প্রভৃতি সংগঠনে থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল চিন্তা ও কর্মে সক্রিয় ছিলেন এবং সর্বজনীন কল্যাণ ও প্রগতিশীল নতুন ভবিষ্যতের আশায় ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে লিখে চলছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ঢাকা শহরে থেকে পরিচিত ও স্বল্পপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানত অর্থ সংগ্রহ করে দিয়ে ও আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছেন। আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৬০-এর দশক থেকে নতুন রেনেসাঁস আকাক্সক্ষা করেন। তিনি মনে করেন ভালো কিছু করতে হলে হুজুগ নয়, দরকার গণজাগরণ। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি সকল বিষয়ে তাঁর লেখায় প্রগতির তাড়না কাজ করে।