বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া কবচকুণ্ডল-এর কাহিনি কী? বিষয় কী? এ প্রশ্নে বিব্রত লেখক কখনো বলেন এই যে দেশ থেকে সবুজ কেটে ফেলা হচ্ছে, এই যে এক প্রজন্মের সঙ্গে আরেক প্রজন্মের চিরায়ত দ্বন্দ্বের টানাপড়েন চলছে, এই যে দাম্পত্য ভাঙছে কিন্তু তা জোড়া লাগাতে মুখে রক্ত তুলে ফেলছে অনেকেই, অথবা দু'জন ছেলে আর মেয়ের দীর্ঘজীবনের পবিত্র সম্পর্কের ভাঙনহীনতা অথবা... এ-কী বয়ান করার বিষয়? নওশীন আর তার স্বামী শফিউলের দাম্পত্য টানাপড়েনের মধ্যে এখানে 'সময়' কখনো প্রধান চরিত্র। নওশীনের গর্ভের দু'সন্তানের এক সন্তান অটিস্টিক... বড় হতে থাকে যেনবা কাকের ঘরে কোকিলের বাচ্চার মতো। এই উপন্যাসের চরিত্রদের আছে একটি শতাব্দী পেরনোর দুর্লভ অভিজ্ঞতা। ক্রমাগত প্রযুক্তির বিবর্তনের সাথে সাথে নিঃশ্বাসহীন দৌড়। নওশীন একটি জীর্ণ আঁধারময় বাস্তবতায় অতি শৈশবেই নিজের মধ্যে এক অত্যুজ্জ্বল ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিল। পরে যা নিষ্ঠুর বাস্তবার পেষণে অনন্ত স্রোতের সাথে ছিন্নভিন্ন হয়ে ভেসে যায়, তার বড় সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্ন ক্ষমতা বিকশিত হতে হতেই সমূলে ঝরে পড়ে। কিন্তু বন্ধু শাহেদের সাথে দিনের পর দিন কথনে বেরিয়ে আসে মানুষের সম্পর্ক, প্রজন্মের বিবর্তন নিয়ে তার প্রবল উদার আধুনিক ভাবনার চিত্র। তারপরও স্বামী শফিউলের মিথ্যাচারের আবহে পড়েও পা বাড়াতে পারে না নওশীন। কারণ কলকাতা থেকে উড়ে আসা সুদীপ্ত তার সত্তায় একটি প্রেমজ ভ্রূণ ছেড়ে বলেছিল, আমার জন্য একটু অপেক্ষা করো। নওশীন পারে নি। কৈশোরে সুদীপ্তর ঝড় তোলা প্রেমে নওশীন ভুলে গিয়েছিল ধর্মের ভেদ, সব রকমের স্থিততা। ওই বয়সেই রামায়ণ, মহাভারত পঠিত নওশীনের হিরো ছিল কর্ণ-এই চরিত্রকে সুদীপ্ত নিজের মধ্যে অনুভব করত।
নাসরীন জাহান ১৯৬৪ সালে ৫ মার্চ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। একজন বাংলাদেশী লেখক, ঔপন্যাসিক, এবং সাহিত্য সম্পাদক। আশির দশকের শুরু থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তার বাবা গোলাম আম্বিয়া ফকির ছিলেন সরকারী চাকুরিজীবী ও মা উম্মে সালমা ছিলেন গৃহিণী। বাবার চাকরীর কারণে থাকতেন মামাবাড়িতে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তাকে আর তার ভাইকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের এক মামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে ভর্তি হন শানকিপাড়া স্কুলে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকতেন ফুফুর বাড়িতে। ফুফুর এক মেয়ে ছিল শবনম জাহান। ফুফু তার নামের সাথে মিল রেখে মা-বাবার দেয়া নাম নাসরীন সুলতানা পরিবর্তন করে তার নাম রাখেন নাসরীন জাহান। স্কুলে পড়াকালীন পারভিন সুলতানা নামে এক বন্ধুর সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে। সে বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-এ ভর্তি হলে তিনিও একই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে শিশু একাডেমি থেকে লেখা চাওয়া হলে দুই বান্ধবী লেখা পাঠায়। দুজনের লেখা প্রকাশিত হয় সেই পত্রিকায়। ব্যক্তিগত জীবনে নাসরীন জাহান কবি আশরাফ আহমেদের স্ত্রী। লেখালেখির সূত্রেই তার সাথে পরিচয় এবং সে থেকে প্রণয়। ১৯৮৩ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের এক মেয়ে। নাম অর্চি অতন্দ্রিলা। নাসরীন জাহান পাক্ষিক পত্রিকা অন্যদিনের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি উড়ুক্কু উপন্যাসের জন্য ১৯৯৪ সালে ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।