“পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমালোচনা (১৯৫৬-২০০৯)" বইটির মুখবন্ধ থেকে নেয়াঃ ১৮৯৮ সালে ঢাকায় প্রথম বায়ােস্কোপ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে এদেশে চলচ্চিত্রের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল কালের পরিক্রমায় আজ তা গণযােগাযােগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। তবে ১৯৫৭ সালে সরকারি উদ্যোগে চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। পর এদেশের চলচ্চিত্র নির্মাণের পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। এফডিসি থেকে প্রাপ্ত প্রযুক্তিগত সুযােগ-সুবিধা নিয়ে এদেশে নিয়মিতভাবে তৈরি হতে থাকে বিভিন্ন চলচ্চিত্র। ২০০৯ সাল পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ২,৭০০ টি পূর্ণদৈঘ্য কাহিনী চিত্র। যা এ অঞ্চলের মানুষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চিন্তাচেতনাকে প্রভাবিত করেছে ব্যাপকভাবে। আবার এখানকার আবহমান কালের সংস্কৃতি থেকে ধার করা চিন্তাচেতনায়ও সমৃদ্ধ হয়েছে চলচ্চিত্র জগৎ। আজ এ জগৎটি সাধারণ মানুষের কাছে বিনােদন, তথ্য ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সপ্তকলার সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্রে জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতির চিত্র প্রতিফলিত হয়ে থাকে। এতে তুলে ধরা হয় মানুষের আশা-হতাশা, সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহের পাশাপাশি সত্য-সুন্দর-কল্যাণের কথাও। চলচ্চিত্র সমালােচনা হচ্ছে। চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা, সার্থকতা, বাস্তবতা, সৃজনশীলতা মূল্যায়ন বা বিচার-বিশ্লেষণের একটি কৌশলকলা। এ সমালােচনা নির্মাতা ও দর্শকদের প্রেরণা ও চলচ্চিত্র উপভােগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যােগ করতে পারে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত শত-শত চলচ্চিত্রের সমালােচনা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও ত্রৈমাসিক পত্রিকায়। এসব সমালােচনা একদিকে যেমন চলচ্চিত্র ইতিহাসের রেকর্ড তেমনি নান্দনিকতার মূল্যায়ন এবং ভালমন্দেরও বিশ্লেষণ। অতীতের স্বাক্ষরবাহী সেসব চলচ্চিত্র সমালােচনা বর্তমানের পূর্বাধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলচ্চিত্র পঠন-পাঠনের বিষয় হয়েছে। যুগের চাহিদার প্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল পাঠ্যবিষয় হিসেবে চলচ্চিত্র সমালােচনাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর হতেই সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমের বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা, প্রশিক্ষণ, প্রকাশনা ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমালােচনা' শীর্ষক গ্রন্থটি প্রকাশ করা হলাে। গ্রন্থভুক্ত মালােচনাসমূহের মধ্যে যেমন রয়েছে ঢাকায় নির্মিত প্রথম সবাক বাংলা কাহিনী চিত্র মুখ ও মুখােশ' (১৯৫৬) তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধ্রুপদী সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র, দেশবদেশে পুরস্কৃত চলচ্চিত্র, ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক-মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। গ্রন্থটি চলচ্চিত্রামােদী পাঠকপাঠিকা, শিক্ষার্থী ও চিত্রকর্মীদের কাজে লাগবে।
Title
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমালোচনা (১৯৫৬-২০০৯)
অনুপম হায়াৎ (মতিউর রহমান ভূইয়া)-এর জন্ম ১ জুন ১৯৫০, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের উজান গােপিন্দী গ্রামে। শিক্ষাগত যােগ্যতা: এম.এ. (সাংবাদিকতা), ডিএইচএম.এ.এস.সি (চলচ্চিত্র)। চলচ্চিত্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বাঙালি মণীষীদের জীবন চরিত, ঢাকার সংস্কৃতি, গণমাধ্যম তাঁর লেখালেখি ও গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র। প্রকাশিত গ্রন্থ ৩০টি। উল্লেখযােগ্য হলাে-সপুংশক অহংকার’ (১৯৮০), ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস' (১৯৮৭), ‘নাট্যকার নজরুল’ (১৯৯৭), ফতেহ লােহানী (১৯৯৪), সৈয়দ মোহাম্মদ তৈফুর (১৯৯৫), মেহেরবানু (১৯৯৭), চলচ্চিত্র জগতে নজরুল (১৯৯৮), দোলন চাপার হিন্দোল (১৯৯৮), বাংলাদেশের কয়েকজন চলচ্চিত্রকর্মী (১৯৯৯), ‘পুরানাে ঢাকার সংস্কৃতিক প্রসঙ্গ’ (২০০১), ‘চলচ্চিত্রবিদ্যা (২০০৪), চলচ্চিত্র সমালােচনা (২০০৬), জহির রায়হানের চলচ্চিত্র : পটভূমি, বিষয় ও বৈশিষ্ট্য (২০০৭), চিত্রনাট্যকলা (২০০৭), রবীন্দ্রনাথ ও চলচ্চিত্র (২০০৮), পুরানাে ঢাকার রাজনীতি ও অন্যান্য (২০০৮), প্রামাণ্য নজরুল (২০০৮), বাংলাদেশের কয়েকজন চলচ্চিত্রকর্মী’ (১৯৯৯), পুরানাে ঢাকার সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গ’ (২০০১), 'নওয়াব পরিবারের ডায়েরিতে। ঢাকার সমাজ ও সংস্কৃতি (২০০১), ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ। ও অন্যান্য, সৃষ্টি সুখের নজরুল প্রভৃতি। টিসিবির সাবেক উর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী (রপ্তানী, পর্ষদ, জনসংযােগ ও বাজার তথ্য), ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, চলচ্চিত্র সেন্সর বাের্ডের সদস্য, চলচ্চিত্র জুরি বাের্ডের সদস্য এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগসহ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, ঢাকা ফিল্ম ইনসটিটিউট, জাতীয় গণমাধ্যম ইনসটিটিউট, বাংলাদেশ ইনসটিটিউট অব কমুনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনের শিক্ষক, বহু পুরস্কারপ্রাপ্ত।