“বাংলাদেশের কৃষি সাংবাদিকতা" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ ‘জমি নয়, হাতগুলাে হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গ্রামীণ জীবন ও জীবিকার প্রধান অবলম্বন। তারপরও কি বলা যায় বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ নয়? জনমন এখনাে কৃষিলগ্ন; সংস্কৃতির বৃহৎ প্রবাহটি আজ পর্যন্ত কৃষি থেকেই উৎসারিত। নব্বই-এর দশক থেকে মােট জাতীয় আয়ে ক্রমাগত কৃষির অবদান কমে এসেছে। কিন্তু দেশের শতকরা ষাটভাগেরও বেশি জনশক্তি এখনাে কৃষি কাজে নিয়ােজিত। বারাে মাস মাঠময় সুফলা ধানের আবাদ, গেরস্ত বাড়ির আঙিনায়, ক্ষেতে, মাচায় ফল আর সবজির সজীব সমারােহ, পুকুরেডােবায় মাছের কোলাহল বাংলাদেশে কৃষির অভাবনীয় সাফল্যের খবর দেয়। বৈশ্বিক মন্দার অভিঘাত যে বাংলাদেশে তেমন পড়ল না তার অন্যতম কারণ কৃষির এই সাফল্য। পত্রিকায়, টিভিতে, বেতারে সাফল্যের এ সকল বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছে। কেবল সাফল্য নয়; কৃষি ও কৃষকের দুঃখ, স্বপ্ন ও সম্ভাবনাও গণমাধ্যম তুলে এনেছে। এসব কাজের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে কৃষি সাংবাদিকতার যে অবয়ব-আয়তন তৈরি হয়েছে তা ব্যবচ্ছেদ এবং বিশ্লেষণ করাই এই বইয়ের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে কৃষির রূপান্তর ঘটেছে দ্রুত। চিরায়ত কৃষি উপকরণ ও ধরন প্রতিস্থাপিত করে জেঁকে বসেছে যান্ত্রিক কৃষি। কৃষি যােগাযােগের ডিফিউসনিস্ট অ্যাপ্রােচের অবিস্মরণীয় ফল যে এগুলাে তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের কৃষি সাংবাদিকতাও এই অ্যাপ্রােচ এবং আবেশের ওপর গড়ে উঠেছে। ফলে কৃষি উপকরণ-যেমন সার, বীজ, সেচ, কীটনাশক কিনতে উদ্বৃত্ত খুইয়ে কৃষক যে তার নিজের জমিতেই ক্রমশ ভূমিদাস হয়ে উঠতে যাচ্ছে কৃষি সাংবাদিকতা সেই বাস্তবতাটি তুলে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তি এবং কৃষি সাংবাদিকগণ বিষয়টি উপলব্ধি করবেন- এই প্রত্যাশা রইল।