"নির্বাচিত সেরা সাত" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: সব্যসাচী সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক মূলত একজন কবি। পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশের নিজস্ব ভূগোল-সমাজসংস্কৃতির স্বকীয়তা ও আত্মস্বরূপ নির্মাণের লগ্নে তাঁর আবির্ভাব। তার পর থেকে সুদীর্ঘ কবিজীবনে তাঁর কাব্যরথ অনেক পথ অতিক্রম করেছে, বহুমাত্রিকতায় হয়ে উঠেছে বিচিত্রদর্শী। বাঙালির জাতীয় মানসকুসুমকে তিনি তাঁর কবিতার হৃদপদ্মে প্রস্ফুটিত করেছেন। আধুনিক কবিতা মাত্রে আত্মসচেতনতা ও আত্মনিরীক্ষার প্রতিকৃতি। সৈয়দ শামসুল হক এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষাপ্রিয়, ব্যক্তির আন্তর্বৈশেষিকতাকে (inter-subjectivity) তিনিই প্রগাঢ়ভাবে ধারণ করেছেন শব্দেছন্দে-অলংকারে। উপাদান রূপে তাঁর কবিতা আত্মস্থ করেছে সময়ের ইতিবৃত্ত, রাজনীতি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, দেশজ প্রকৃতি ও মুখশ্রী, প্রত্নছাঁচ এবং পুরাণপ্রতিমা। বিচিত্র তাঁর বলয়-সনেট, গীতিকবিতা, দীর্ঘকবিতা, নাট্যকবিতা ও কাব্যনাট্য ইত্যাকার আঙ্গিকে কখনো তিনি স্থির প্রশান্ত ছোট্ট ঢেউয়ের মতো সান্দ্রঘন, কখনো বা উত্তাল স্রোতস্বিনীর মতো বিপুল তরঙ্গোচ্ছ্বাস। এই যে আপাত প্রশান্তি আর উত্তালতা-দুইয়ের আভ্যন্তর প্রণোদনা হচ্ছে স্বসময়ের সংকট-উৎক্রান্তি, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদের লড়াই এবং সর্বোপরি একান্ত ব্যক্তিক মনোজগতের রহস্য সন্ধানের প্রহেলিকা। একদিকে সুগভীর সুনিশ্চয়তা ও জীবন প্রতীতি, আরেকদিকে নিবিড় বিষাদঘন মনোভুবনের অনিশ্চয়তা, অন্তর্নিঃসহায়তা। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বও তাঁর কবিতাশরীরে প্রবিষ্ট হয় এবং আত্মিক সংকটের সঙ্গে একধরনের বোঝাপড়া করে। সবকিছু আবার মিথস্ক্রিয়া ঘটায় দেশ-প্রকৃতি-আঞ্চলিক রূপরঙের সঙ্গে। সৈয়দ শামসুল হকের কবিতায় আমাদের কাব্যভাষার রূপ-রূপান্তরের রূপান্বিত পরিচর্যাটি সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান, ‘কথা ও ইঙ্গিতের দুর্লভ’ সন্নিপাতের সাধনাও লক্ষ্যযোগ্য।
জন্ম : ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ প্রয়াণ : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ পুরস্কার : আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নাসরিউদ্দনি র্স্বণপদক, জেবেন্নুসা-মাহবুবউল্লাহ্ র্স্বণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, পদাবলী পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।