"সনাতন ধর্মকোষ" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ সনাতন ধর্মের ক্ষেত্রে সবকিছুই ছিল মানুষের সহজাত জ্ঞানৰ্চ্চার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। নানা মত নানা পথে তা অগ্রসর হচ্ছিল। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যর সন্ধান চলছিল। কিন্তু কালক্রমে অভিজাত শ্রেণীর স্বার্থে তাতে প্রবল প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ধর্ম নির্দিষ্ট জীবনাচরণবিধি শাসক-শােষকদের নিয়ােজিত শাস্ত্রকারদের হাতে সাধারণ মানুষের জন্য শৃঙ্খলিত এক জীবনব্যবস্থার জন্ম দেয়। জাত বর্ণের ভেদাভেদের কঠিন নিগড়ে বন্দি হয় সাধারণ মানুষ। আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজের সাম্যবাদী আদর্শ, বেদ-উপনিষদ, রামায়ণ-মহাভারত ইত্যাদির থেকে থেকে ধর্মক্ষেত্রে উদার পরিমণ্ডল নির্মাণের প্রায়স, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের ধাক্কা কোনকিছুই একেবারে বিফল হবার নয়। এ-সবের ধারাবাহিকতায় সনাতন ধর্মের উদার প্রেক্ষাপটটি একেবারে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারেনি। চৈতন্য দেবের ভাব-আন্দোলন, মধ্যযুগের বৈষ্ণবের গান ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই', রামকৃষ্ণের যত মত তত পথের স্বীকৃতি-সর্বধর্ম সমন্বয়ের বাণী, বাউলের দেহকেন্দ্রিক সাধনা, স্বামী বিবেকানন্দের জীবে প্রেমের তত্ত্ব, রামমােহন বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কার আন্দোলন, বি. আম্বেদকরের জাতিভেদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান ইত্যাদির মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মের উদার প্রেক্ষাপটের চর্চার যে পরিবেশ তৈরি হয়, তার পরিধি ক্রমে বিস্তৃত হচ্ছে বলেই আমাদের ধারণা।