আমরা দুটি শব্দ জানি- ‘জ্যোতির্বিদ্যা’ আর ‘জ্যোতিষবিদ্যা'। উচ্চারণে শব্দ দুটো খানিকটা কাছাকাছি। অর্থ এদের একেবারে উল্টো। ‘জ্যোতিষবিদ্যা’কে বলি 'Astrology'। যারা ‘জ্যোতিষবিদ্যা’ চর্চা করেন তাদের বলি আমরা ‘জ্যোতিষী’। যারা ‘জ্যোতির্বিদ্যা’ চর্চা করেন তাদের বলি আমরা ‘জ্যোতির্বিদ’। জ্যোতির্বিদ্যায় কি হয়? পদার্থবিদ্যা, মিলিয়েই তৈরি হয় ‘জ্যোতির্বিদ্যা’র জগৎ। জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়গুলাে স্কুলে প্রকৃতিবিজ্ঞান বা ভূগােলের অংশ হিসেবে পড়ানাে হয়। পাঠ্যপুস্তকগুলােতে আছে কিছু অপ্রতুল তথ্য। তা পড়ে পরীক্ষায় পাস করা গেলেও কোনাে বাস্তবসম্মত জ্ঞান লাভ করা যায় না। বুধ থেকে শনি পর্যন্ত পাঁচটি গ্রহকে খালি চোখেই দেখা যায়, দুরবিন লাগে না। তবু ছাত্রছাত্রীরা গ্রহগুলাে একবারও চোখে না দেখেই তাদের ব্যাস, সূর্য থেকে দূরত্ব, কক্ষাবর্তন ও অক্ষাবর্তন কাল ইত্যাদি মুখস্থ করে। আমাদের স্কুল পাঠ্যপুস্তকে তারা চেনা, চন্দ্রকলা, সূর্যঘড়ি, ভূপৃষ্ঠের কোনাে স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা নির্ণয়, রাশিচক্র ও গ্রহগতি, গােলীয় জ্যামিতি, পৃথিবীর অক্ষাবর্তন ও কক্ষাবর্তন গতি, অয়নচলন, ঋতু পরিবর্তন ইত্যাদির কিছুটা আলােচনা আছে। উল্লিখিত বিষয়ে আরও তথ্যসমৃদ্ধ বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত এই বই ছাত্রছাত্রীসহ ভূগােল ও বিজ্ঞান শিক্ষক, বিজ্ঞানমনস্ক যেকোনাে ব্যক্তির কাছে প্রয়ােজনীয়। কিন্তু শুধু পড়লে হবে না, পড়ার সাথে আকাশ দেখতে হবে, যারা আকাশ চেনেন না, জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশােনা করেননি তেমন পাঠকও এই বইটি পড়ে একটু চেষ্টা করলেই আকাশ চিনতে এবং সবকিছু সরেজমিনে বুঝতে পারবেন।
সৌমেন সাহা ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে এই জেলাতেই। খুলনার স্বনামধন্য সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিজ্ঞান , প্রযুক্তি ও গণিতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই পাড়ি জমান সুদূর ইংল্যান্ডে। সেখানকার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লন্ডন কলেজ অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড কম্পিউটিং বিভাগ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমাসহ বি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। সৌমেন সাহা নিয়মিত বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, বিশেষত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত লেখার সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। তাঁর পেশাগত জীবনেও তিনি বিজ্ঞান গবেষণার সাথে জড়িত। খুলনার ঐতিহ্যবাহী প্রাণিক বিজ্ঞানাগার খুলনার কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। জাতীয় বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রকল্পের উদ্ভাবনের কারণে তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন। পাঠক সমাদৃত সৌমেন সাহা এর বই সমূহ হলো ‘প্রাচীন ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ’, ‘বৈদিক গণিতের পরিচয়’, ‘পাগল করা গণিত’, ‘যন্ত্ররা যেভাবে কাজ করে’, ‘বিজ্ঞানের জানা অজানা কথা’, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহজ পাঠ’, ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে’ ইত্যাদি। তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু হলো বিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। সাধারণ পাঠকদের কথা মাথায় রেখে রচিত সৌমেন সাহা এর বই সমগ্র খুব সহজ ও সাবলীলভাবে এই জটিল বিষয়গুলো উপস্থাপন করে। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে আত্মমগ্ন এই লেখক বর্তমানে ঢাকার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।