শৈশবে টলস্টয়ের লেখা একটা ছোট গল্প পড়েছিলাম যা আজো মনে আছে। গল্পের ইংরেজি নাম ছিল ‘হাউ মাচ ল্যা- ডাজ এ ম্যান রিকয়ার’, কতটুকু জমি একজন মানুষের প্রয়োজন। এই গল্পটি বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প। আধুনিক বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক ইউলেসিসের রচয়িতা জেমস জয়েস তার কন্যাকে একথা বলেছিলেন। টলস্টয় বেশ কিছু ছোট গল্প লিখেছেন, যা লিখেছেন তাই হয়েছে কালোত্তীর্ণ। তবে নিছক গল্প বলার জন্য গল্প নয়। তার প্রতিটি গল্পের পেছনে রয়েছে জীবনের গভীরতম সত্য ও নৈতিক মূল্যবোধ। টলস্টয় প্রধানত উপন্যাস রচনার জন্য বিখ্যাত হয়েছেন। তার ‘ওয়ার এন্ড পিস’ ও ‘আনা কেরনিনা’-কে উপন্যাসের আদর্শ বলা হয়। এক কালে রচিত হত মহাকাব্য সেখানে তুলে ধরা হত একটা যুগ। একটা জাতি তথা কোন মানব সভ্যতার ইতিহাস। তেমনি ঊনবিংশ শতকে যখন উপন্যাস রচিত হতে আরম্ভ হয় তখন তারও ব্যাপকতা বিশাল ও বিস্তৃত হচ্ছিল। ‘ওয়ার এ-পিস’ উপন্যাসে সেই বিস্তার ও বিশালতা রয়েছে। সেখানে তিনি সভ্যতার ইতিহাসকে তথা ঐতিহাসিককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে টলস্টয়ের জন্ম হয়েছিল ১৮২৮ সালে রাশিয়ার অন্তর্গত তুলা প্রদেশে । তিনি ছিলেন চার ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। শৈশবে মাতৃবিয়োগের পর তার এক ফুপু তার দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহন করেন। সাত বছর পর যখন তার পিতা কাউন্ট নিকোলা টলস্টয় মারা যান তখন এক খালা তাদের অভিভাবক নিযুক্ত হন। আবার তার মৃত্যুর পর আর এক খালা তাদের দায়িত্ব নেন। প্রথম জীবন তার এমনই কেটেছে কিন্তু তার কোন চিহ্ন তার সাহিত্যে প্রকাশিত হয়নি। বরং দুঃখকে জীবনের অর্থ নির্ণয়ের মাপকাঠিরূপে বিবেচনা করতে চেয়েছেন। ধনী সম্ভ্রান্ত অভিজাত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও শৈশবে ও বাল্যে মাতৃবিয়োগ ও পিতৃবিয়োগের কষ্ট ভোগ, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল ফলাফল না করার পর নানাবিধ পেশা গ্রহণ করে শেষে সৈনিক হিসেবে যুদ্ধকে অনেক নিকট থেকে দেখেছিলেন। জীবনকে তিনি নানাভাবে দেখে শেষ জীবনে বেছে নিয়েছিলেন এক প্রকার বৈরাগ্য। টলস্টয়ের জীবন যেমন বিশাল ও বিচিত্র তেমনি তার সাহিত্যকর্ম অসাধারণ। তাকে জানতে হলে তার রচিত উপন্যাস, ছোট গল্প ও অন্যান্য রচনা পাঠ করা আবশ্যক। আগেই বলেছি তিনি জীবনের শেষে বৈরাগ্যকে বেছে নিয়েছিলেন এবং তার মৃত্যু হয়েছিল এক অপরিচিত রেল স্টেশনে। টলস্টয় মৃত্যুবরণ করেছিলেন ১৯১০ সালে, ৮২ বছর বয়সে। তবে মজার কথা, মৃত্যুর সময় তার পকেটে পাওয়া গিয়েছিলো আমাদের দেশেরই একজন বিখ্যাত ব্যক্তি প্রফেসর হোসেন সাহেদ সোহরোওয়ার্দী ২৪শে অক্টোবর ১৮৯০ অনূদিত রসুলের একটি ছোট হাদিস সংকলন। তাতে মনে হয় তাদের উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। যা অনেকেই জানে না।
জন্ম ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২, লক্ষ্মীপুর, বাংলাদেশ। বাবা মো. রুহুল আমিন, মা সুফিয়া আক্তার। তিনি সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে গণিতে। অনার্স করেন। বর্তমানে ঢাকা কলেজে গণিতে 1 মাস্টার্স করছেন।