ফ্ল্যাপে লিখা কথা ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির প্রধান বিজয়ই শুধু ছিল না, ছিল শত সহস্র বছরের লড়াই-সংগ্রাম এবং অগ্রযাত্রার সর্বশ্রেষ্ঠ মাইলফলকও। এই যুদ্ধের ভেতর দিয়ে জাতি পেয়েছে তার স্বাধীন স্বদেশভূমি। স্বদেশভূমি লাভ করাই শেষ ছিল না। এই জনগোষ্ঠী চেয়েছিল পুরনো সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন; চেয়েছিল শোষণমুক্তি, গণতন্ত্র, আত্ননির্ভরশীল একটি জাতীয় ব্যবস্থাপনা। লেখক-সাংবাদিক আবুল হোসেন খোকন তাঁর ‘জনযুদ্ধের দিনগুলি’ গ্রন্থে সেই আকাঙ্ক্ষার কথাই ব্যক্ত করেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেছেন; বলেছেন, জনযুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শোষণমুক্ত-অসাম্প্রদায়িক-জনগণভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের যে লক্ষ্য ছিল তা আজও অর্জিত হয়নি। আর এ কারণেই জনযুদ্ধ এখনও চলমান।
এই জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে শত্রুপক্ষ একের পর এক যে মরিয়া এবং ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা চালিয়ে আসছে -লেখক নানা ঘটনা প্রবাহের ভেতরে অবস্থানের কারণে তাঁর দেখা জানা বোঝা এবং অভিজ্ঞতা থেকে সে বিষয়টিই এ গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। শুধু সাংবাদিক হিসেবেই নয়, এক সময়ের সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে এ ক্ষেত্রে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডচিত্র, সদ্য স্বাধীন দেশের বাস্তবতা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের রাজনীতি, ১৯৭৫-এ পটপরিবর্তন , ‘৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসন, ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের ঘটনা, সামরিক শাসনের সময় সামরিক-অসামরিক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন এবং বীভৎস নির্মূলযজ্ঞের (কিলিং মিশনের) নানা তথ্য তুলে ধরেছেন। সেইসঙ্গে প্রকাশ করেছেন জনযুদ্ধের প্রতিপক্ষশক্তি বিশেষ করে মার্কিন-পাকিস্তান এবং তাদের এদেশীয় অনুসারীদের নানা তৎপরতার কথা। -রশীদ হায়দার