"দুচাকায় দুনিয়া" বইটিতে লেখা ফ্ল্যাপের কথা: ১৯২৬ সালে সাইকেলে পৃথিবী পর্যটনে বেরিয়েছিলেন বিমল মুখার্জি (১৯০৩-১৯৮৭)। এর আগেই ১৯২১-২৬ সালে সাইকেলে ভারত ভ্রমণ শেষ করেছেন। নামমাত্র অর্থ এবং অজানা জগতের প্রবল আকর্ষণ। সম্বল করে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন বিমল মুখার্জি। আরব, ইরান, সিরিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, রাশিয়া, গ্রিস, ইজিপ্ট, সুদান, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, জামানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, ইকোয়েডর, পেরু, হাওয়াই দ্বীপ, জাপান, চিন, হংকং, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশ ঘুরে ভারতে ফিরে আসেন। ১৯৩৭ সালে। প্রথম ভারতীয় হিসাবে ভূ-পর্যটনের বিপুল ও বিচিত্র অভিজ্ঞতা বিমল মুখাজি লিপিবদ্ধ করেছেন এই বইয়ে। লেখকের পুত্র সিদ্ধার্থ দাস মুখার্জি ও পুত্রবধূ অনুরাধা মুখার্জি জানিয়েছেন, এই বইটির যে অল্পসংখ্যক কপি ছাপা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ নিঃশেষিত। এখন আর পাওয়া যায় না। এদের সাগ্রহ সম্মতিতে দুচাকায় দুনিয়া ১৯৯৫-৯৬এ ধারাবাহিকভাবে ভ্রমণ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। নামমাত্র সম্পাদিত ও কিছুটা সংক্ষিপ্ত আকারে। ভ্রমণ-অনুরাগী, অভিযানপ্রিয়, দুরাসক্ত বাঙালির জন্য বিমল মুখার্জির সাইকেলে দুঃসাহসিক বিশ্বভ্রমণের অভিজ্ঞতা পরিবেশন করতে পেরে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। বইটিকে এককথায় বাঙালির জাতীয় সম্পদ বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না।
বিমল মুখোপাধ্যায় (১৯০৩–১৯৮৭) প্রথম ভারতীয় ভূপর্যটক ছিলেন, যিনি ১৯২৬ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় সমস্ত মহাদেশ একটি সাইকেলে করে ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি পরবর্তীকালে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে দু চাকায় দুনিয়া নামে একটি বই লেখেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই ডিসেম্বর অশোক মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিমল মুখোপাধ্যায়, আনন্দ মুখোপাধ্যায় ও মণীন্দ্র ঘোষ কলকাতা শহরের টাউন হল থেকে চারটি সাইকেলে করে বিশ্বভ্রমণের জন্য যাত্রা করেন। তাঁরা বিবেকান্দ সেতু পেরিয়ে চন্দননগর, বর্ধমান, রাঁচি, বেনারস, এলাহাবাদ হয়ে দিল্লি পৌঁছন। দিল্লিতে তাঁরা বিদেশযাত্রার অনুমতিপত্র লাভ করে আলোয়ার, জয়পুর, গোয়ালিয়র, ভরতপুর, দুঙ্গারগড় ও প্রতাপগড়ের রাজাদের আমন্ত্রণ রক্ষা করেন। সেখান থেকে তাঁরা আজমির, উদয়পুর হয়ে যোধপুর যান। যোধপুর থেকে তাঁরা থর মরুভূমির মধ্য দিয়ে দুই মাস ধরে যাত্রা করে হায়দ্রাবাদ ও করাচি পৌঁছন। করাচি থেকে বি আই কোম্পানীর জাহাজে করে বাসরা পৌছে সেখান থেকে মরুভূমির পথে তাঁরা বাগদাদ হয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করেন। বিশ্বভ্রমনের কাহিনী গুলি লিপিবদ্ধ করে রাখতে বিমল মুখোপাধ্যায়ের মা তাকে উৎসাহিত করেন।