“হুমায়ুননামা" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ভারতবর্ষের ইতিহাসে মােগল শাসনপর্ব নানা দিক থেকেই আকর্ষণীয়। মােগল ইতিহাস রচনার আকর সূত্রের মধ্যে কয়েকজন মােগল বাদশাহর আত্মজীবনী এবং সমকালীন লেখকদের লেখা কোনাে কোনাে বাদশাহের জীবনচরিত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এদিক থেকে ভারতে মােগল শাসন প্রতিষ্ঠার সূচনাপর্বের ইতিহাস জানার দ্বার উদঘাটন করেছিলেন সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবুরের মেয়ে এবং বাদশাহ হুমায়ুনের বােন গুলবদন বেগম। এই বিদুষী মােগল কন্যা তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র মহান মােগল সম্রাট আকবরের উৎসাহে লিখেছিলেন জীবনী গ্রন্থ ‘হুমায়ুননামা’। এই গ্রন্থে গুলবদন বেগম নিজের স্মৃতি আর আনুষাঙ্গিক সূত্র ব্যবহার করে সম্রাট বাবুরের সংগ্রামমুখর জীবন, এবং নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে ভারতে মােগল অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সুনিপুণভাবে বিবৃত করেছেন। এই পর্বটি ছিল হুমায়ুননামার আখ্যানভাগ। গুলবদন বেগমের স্মৃতিতে সবচেয়ে জীবন্ত ছিল বাদশা হুমায়ুনের জীবনকাল। হুমায়ুন খুব সুস্থিরভাবে সাম্রাজ্য পরিচালনার সুযােগ পাননি। নানামুখি সংকটের মধ্যদিয়ে তাকে অগ্রসর হতে হয়েছে। প্রায় সারাটি জীবনই তিনি সংঘাতময় সময় অতিক্রম করেছেন। হুমায়ুননামার পাতায় সেসব জীবন্ত করে তুলেছেন গুলবদন বেগম। হুমায়ুননামা পৃথিবীতে অনেক ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে। এগুলাের মধ্যে এ. এস. বেভেরিজের ইংরেজি ভাষার অনুবাদটিকে অনেক বেশি সফল বলে মনে করা হয়। বর্তমান বাংলা অনুবাদটি বেভেরিজের হুমায়ুননামা অনুসারেই সম্পাদিত হয়েছে। অনুবাদক মধ্যযুগের বাংলা ও ভারত ইতিহাসের গবেষক হওয়ায় বিষয়বস্তু ও পরিবেশকে * গভীরভাবে অনুধাবন করে গুলবদন বেগমের বক্তব্য অনেকটা স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। সাবলীল ভাষায় অনূদিত হওয়ায় ভাষা ও বর্ণনায় কোনাে আড়ষ্ঠতা নেই। পাঠককে মােহাবিষ্ট করে সূচনা থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে। পাদটীকা ব্যবহার করে পাঠকের নানা ধরনের প্রশ্ন ও কৌতুহল মেটানাের চেষ্টা রয়েছে গ্রন্থটিতে। কোথাও কোথাও ব্রাকেট ব্যবহার করে পাঠকের সাধারণ প্রশ্নেরও মীমাংসা করার চেষ্টা রয়েছে এই গ্রন্থে।
ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ১৯৬০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার গনাইসার গ্রামে। পিতা মরহুম মোসলেম চোকদার ও মা মরহুমা রেজিয়া বেগম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে যথাক্রমে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ফারসি ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স সম্পাদন করেন। ১৯৮৫ সালে। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি. অর্জন করেন ১৯৯৪ সালে। সত্তর ও আশির দশকে ‘শাহনাজ কালাম’ লেখক নামে ছড়া ও গল্প লিখিয়ে হিসেবে পরিচিত হলেও পেশা জীবনে এসে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠক্রমভিত্তিক গ্রন্থ রচনা এবং শিল্প-সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক গ্ৰন্থ ও প্ৰবন্ধ লেখায় বিশেষ মনোনিবেশ করেন। ড. শাহনাওয়াজের রচিত ও সম্পাদনাকৃত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এক যুগের বেশি সময়কাল ধরে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে রাজনীতি ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ক কলাম লিখে আসছেন।