রবীন্দ্রনাথ-সংগৃহীত লালনের গানের পান্ডুলিপি" বইটি সর্ম্পকে কিছু তথ্যঃ লোকায়ত বাঙালির সমাজ-সংস্কৃতিতে লালন একটি অবিস্মরণীয় ধ্রুপদী নাম। ‘মানুষ সত্য’ এই মতের প্রতিপোষক লালন তাঁর গানের ভেতর দিয়ে যে মরমি ভুবন নির্মাণ করেছিলেন, তা সমকালকে যেমন উত্তরকালকেও তেমনি বিস্মিত-মুগ্ধ-অভিভূত-প্রাণিত করেছিল। গানই ছিল তাঁর আনন্দ-উপলব্ধি গানই ছিল তাঁর জীবনবেদ। লালনই বাউলগানের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ পদকর্তা এবং সেইসঙ্গে বাউলসাধনার প্রাজ্ঞ ভাষ্যকারও। লালন শতবর্ষেরও বেশি আয়ু পেয়েছিলেন। তিনি এই দীর্ঘজীবনে কত গান রচনা করেছিলেন, তার হদিস মেলা ভার। তাঁর প্রামাণ্য গানের সংখ্যা সাত শর কাছাকাছি। মুখে মুখে রচিত বলে এবং যথাসময়ে লিপিবদ্ধ না হওয়ার কারণে অনেক গানই হারিয়ে গেছে। অবশ্য তাঁর জীবিতকালেই এইসব গানের সংগ্রহ ও প্রকাশ আরম্ভ হয়। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন এই কাজের প্রথম উদ্যোগী। পরে রবীন্দ্রনাথ এ-বিষয়ে পালন করেছিলেন প্রেরণাসঞ্চারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। হরিনাথ ও রবীন্দ্রনাথের মাঝের সময়ে আরো অনেকে লালনের গান সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছেন। উত্তরকালে লালনের গান সংগ্রহে মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, বসন্তকুমার পাল, মতিলাল দাশ, উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এঁরা নিবেদিত ছিলেন। কিন্তু এর পরে লালনচর্চা ও পদ-সংগ্রহে একধরনের নৈরাজ্য দেখা দেয়। অজ্ঞতা কিংবা বিশেষ উদ্দেশ্য-সাধনের কারণে লালনের খন্ডিত, বিকৃত, জাল, নকল গান প্রচারিত ও প্রকাশিত হতে থাকে.....
আবুল আহসান চৌধুরী জন্ম ১৩ জানুয়ারি ১৯৫৩ কুষ্টিয়ার মজমপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স), এমএ ও পিএইচডি ৩২ বছর ধরে অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত। বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। মূলত প্রাবন্ধিক ও গবেষক সমাজমনস্ক ও ঐতিহ্যসন্ধানী। অনুসন্ধিৎসু এই গবেষক সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা দুষ্প্রাপ্য ও অজ্ঞাত উপকরণ সংগ্রহ, উদ্ধার ও তা ব্যবহার করে থাকেন। তার লালন সাঁই, কাঙ্গাল হরিনাথ ও মীর মশাররফ হােসেন বিষয়ক গবেষণাকাজ দেশ-বিদেশে সমাদৃত। গবেষণায় বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৯ সালে । প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৭০।