এলিস মানরোর অসাধারণ এই ছোটগল্প সংকলনটিতে আমরা বিভিন্ন বয়সের নারীকে দেখি বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে। লেখক তাদের জীবনযাপন এখানে পরম মমতায় এঁকেছেন যেন পাঠক তা চোখের সামনে দেখতে পায়।
পলাতক যে গল্পের শিরোনাম সেখানে আছে এক তরুণী মেয়ে, সে পালিয়ে যেতে চায়, যদিও সে ভালো করেই জানে যে স্বামীকে ছেড়ে সে থাকতে পারবে না। নেশা গল্পটিতে গ্রামের একটি মেয়ে, হোটেলে একটি চাকরির বদৌলতে যে শহুরে জীবনের সাথে পরিচিত হয়, আকস্মিকভাবে জানতে পারে তীব্র কামনার মিথ্যে রহস্য জীবনকে কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায়। তিনটি গল্প আছে যার কেন্দ্রীয় চরিত্র জুলিয়েট- প্রথমটিতে সে মেয়েদের স্কুলে পড়াতে পড়াতে আবেগী ভালোবাসার পেছনে ছুটে যায়; দ্বিতীয়টিতে সে সন্তানসহ ফিরে আসে তার বাবা-মায়ের কাছে, যাদের অতীত আর বিবাহিত জীবন সে নতুন করে আবিষ্কার করে; আর শেষটিতে, জুলিয়েট ভাবছে যে তার সন্তান ধর্মীয় উন্মাদনার মধ্যে হারিয়ে গেছে, এক দীর্ঘস্থায়ী নীরবতা আর ব্যাখ্যাতীত ঘটনার মধ্যে মিলিয়ে গেছে। শেষ গল্প ক্ষমতা দেখায় যে ভবিষ্যৎ চোখের সামনে দেখার ক্ষমতাসম্পন্ন মহিলা কী করে তার হবু স্বামী এবং ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর জীবনে ধারাবাহিক নানান ঘটনার অবতারণা করে। দেখানো হয় সেই ঘটনাগুলোর মধ্যে দিয়ে জীবনের গভীর শিক্ষা কেমন করে পেয়ে যায় একজন।
সম্পূর্ণ এই সংকলনটির মধ্যে, এলিস মানরো চরিত্রগুলোকে আমাদের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যেন তারা আমাদের চেনা, আমাদেরই প্রতিবেশী। এখানে আছে অস্বাভাবিক ধোঁকা এবং অশেষ ভালোবাসার কাহিনি- পুরুষ এবং নারীর মধ্যে, বন্ধুদের মধ্যে, বাবা-মা এবং সন্তানের মধ্যে- এসব নিয়েই তো আমাদের জীবন। আর এখানেই এলিস মানরোর সার্থকতা, কল্পকাহিনিকে আমাদের জীবনের বাস্তবতায় এক করে দেয়া।
এলিস মানরো কানাডার অন্টারিওর উইংহ্যামে ১০ জুলাই ১৯৩১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে উঠেন সেখানেই আর পড়ালেখা করেন ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর প্রকাশিত গল্প সংকলনগুলোর মধ্যে- ড্যান্স অব দ্য হ্যাপি শেডস; সামথিং আই হ্যাভ বিন মিনিং টু টেল ইউ; দ্য বেগার মেইড; দ্য মুনস অব জুপিটার; দ্য প্রোগ্রেস অব লাভ; ফ্রেন্ড অব মাই ইয়োথ; ওপেন সিক্রেটস; সিলেকটেড স্টোরিজ; দ্য লাভ অব এ গুড ওম্যান; এবং হেটসশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, কোর্টশিপ, লাভসশিপ, ম্যারিজ উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে, লাইভস অব গার্লস অ্যান্ড ওম্যান। তার অসাধারণ লেখক জীবনে তিনি অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৬৮, ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে মোট তিনবার তিনি কানাডার রাষ্ট্রিয় সাহিত্য পুরস্কার গভর্ণর জেনারেল এওয়ার্ড, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালে গীলার প্রাইজ এবং ২০০৯ সালে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ এবং ২০১৩ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ছোট গল্পের জন্য তিনি পেয়েছেন রি পুরস্কার, লানান সাহিত্য পুরস্কার, ইংল্যান্ডের ডাব্লিউ এইচ স্মিথ বুক পুরস্কার এবং ইউনাইটেড স্টেটস ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস সার্কেল পুরস্কার। নিউ ইয়র্কার, দ্য আটলান্টিক মান্থলি, দ্য প্যারিস রিভিউ ইত্যাদি বিখ্যাত পত্রিকায় তার গল্প নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে, এবং তাঁর গল্প বিশ্বের অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
এলিস মানরো এবং তার স্বামী কানাডার অন্টারিও, ক্লিনটন, লেক হুরন আর বৃটিশ কলাম্বিয়ার কোমোক্স অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে জীবন কাটাচ্ছেন।
অনুবাদক : আফসানা বেগম ২৯ অক্টোবর ১৯৭২ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন কিছুদিন। এখন পারিবারিক শিল্প-প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
জেমকন তরুণ কথাসহিত্য পুরস্কার ২০১৪ বিজয়ী আফসানা বেগম মূলত ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক। অনুবাদ ও মৌলিক মিলিয়ে প্রকশিত বইয়ের সংখ্যা সাতটি।
“উত্তর আমেরিকার কথা সাহিত্যিকদের মধ্যে এলিস মানরোকে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তার ছোট গল্প সংকলন “পলাতক” একটি বিস্ময়কর সৃষ্টি ।”
আফসানা বেগম জন্ম ২৯ অক্টোবর ১৯৭২ সালে ঢাকায় । বাবার চাকরির সুবাদে শৈশব-কৈশাের কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়, বিশেষত দিনাজপুরে । দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকার হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায়। প্রশাসনে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ।। পরে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেখানেই পিএইচডি গবেষণা করছেন। উল্লেখযােগ্য বই : প্রতিচ্ছায়া, বেদনার আমরা সন্তান, আমি অথবা আমার ছায়া, দিনগত কপটতা। অনুবাদ করেছেন নাদিন গড়িমার, উইলিয়াম ফকনার, হুলিও কোর্তাসার, অ্যালিস মানরাে, আইজাক আসিমভ, ফিদেল কাস্ত্রোসহ অন্যান্য লেখকের কালজয়ী রচনা। ২০১৪ সালে পেয়েছেন জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার ।