"মিশরের ইতিহাস" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ইতিহাসে মিশর এক রহস্যমোড়া, কুয়াশাঢাকা অধ্যায়। ইতিহাসবিদরা যখন তাকান এই সভ্যতার দিকে, তাদের চোখে থাকে রোমাঞ্চ। কিন্তু পিরামিড, মমি আর স্ফিংসের বাইরেও মিশর সভ্যতার তো একটা নিজস্ব গল্প আছে। আর সেই গল্পটা আসিমভের চেয়ে ভালো করে কে আর বলতে পারবে! সায়েন্স ফিকশন জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্টোরিটেলার বসেছেন মিশরীয় সভ্যতার কাহিনী শোনাতে। প্রাগৈতিহাসিক মিশর থেকে শুরু; শেষ করেছেন মুসলিমদের যুগে গিয়ে। এখানেই প্রাচীন আর মধ্যযুগে জন্ম নিয়েছিল গণিত, জ্যামিতি আর ভূবিদ্যা শাস্ত্র। প্রণয়ন হয়েছিল সন গণনার নতুন বর্ষপঞ্জি। বইটির পাতায় পাতায় আসিমভের গল্প বলার সহজাত প্রতিভার ছাপ ছড়ানো।
পিরামিড, মমি আর স্ফিংসের বাইরেও মিশর সভ্যতার একটা নিজস্ব গল্প আছে। সে গল্প রহস্যাবৃত। সেই গল্পটাই আসিমভ বলেছেন মিশরের ইতিহাস-এ। প্রাগৈতিহাসিক মিশর থেকে শুরু করে শেষ করেছেন মুসলিম শাসনের যুগে গিয়ে। যে মিশরে প্রাচীন আর মধ্যযুগে জন্ম নিয়েছিল গণিত, জ্যামিতি আর ভূবিদ্যা শাস্ত্র। প্রণয়ন হয়েছিল সন গণনার নতুন বর্ষপঞ্জি।
আইজাক আসিমভ ১৯৪৮ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন, আর তিনি বোস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব্ মেডিসিন-এ প্রাণরসায়ন (বায়োকেমিস্ট্রি) বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। কিন্তু তাই বলে তাঁর বই লেখার বিষয়ের মধ্যে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তিনি যেমন অনায়াসে লেখেন রসায়নশাস্ত্র নিয়ে, তেমনি অনায়াসে লেখেন গণিতশাস্ত্র নিয়ে, আবার তেমনি অনায়াসে রচনা করেন উপন্যাস। বিজ্ঞান ও মানবিক উভয় বিষয়ে সমান দক্ষতার এই মিশ্রণের কারণেই ডক্টর আসিমভের পক্ষে সম্ভব হয়েছে গ্রিক্ পৌরাণিক কাহিনী ও আমাদের বৈজ্ঞানিক ও তদ্বহির্ভূত ভাষার ওপর তাদের প্রভাব বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করা। আমরা নিশ্চিত, অন্যদেরকে খুব সহজেই প্রভাবিত করতে পারে তার এমন অত্যুৎসাহ ও সহজ করে লেখার ধরন পাঠকদের আনন্দ দেবে।
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা লেখক আইজ্যাক আসিমভ সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার পেত্রোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ব্রুকলিনে শুরু করেন নতুন জীবন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা তাকে লাগিয়ে দেন নিজেদের ক্যান্ডিশপে দোকানদারির কাজে। ছোট্ট আসিমভ পাঁচ বছর বয়সেই নিজে নিজে পড়তে শিখে যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৯৩৯ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স এবং পরবর্তীতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হলেও তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে নিয়মিত শিক্ষকতা করেননি। ১৯৫০ সালে বের হয় তাঁর প্রথম বই ‘পেবলস ইন দ্য স্কাই’, যা জয় করে নেয় সাধারণ পাঠকের মন। এরপর একের পর এক লেখা বের হতেই থাকে তাঁর। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মূল আধেয় হলো সায়েন্স ফিকশন, পপুলার সায়েন্স, রহস্য ইত্যাদি। সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন এই লেখক ৫০০টিরও বেশি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। জনপ্রিয় লেখক আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমূহ হলো, ‘আই,রোবট (১৯৫০)’, ‘ফাউন্ডেশন (১৯৪২)’, ‘দ্য এন্ড অব ইটারনিটি (১৯৫৫)’, ‘দ্য কেভস অব স্টিল (১৯৫৩)’, ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ (১৯৬৬)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত উপন্যাসই শুধু নয়, তুমুল জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পগুলোও। আসিমভ এর রচনাগুলো থেকে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যার মাঝে আছে ‘আই,রোবট (২০০৪)’, ‘বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান (১৯৯৯)’ ইত্যাদি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমগ্র জয় করে নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের মন। তাঁর বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের নামিদামী পরিচালক তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, বানিয়েছেন সিরিজ। ১৯৮৭ সালে ‘সায়েন্স ফিকশন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ তাকে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশন (ট্রিলজি)’ ১৯৬৬ সালে এনে দেয় ‘হুগো এওয়ার্ড’, ‘দ্য গডস দেমসেল্ভস’ এনে দেয় একইসাথে ‘হুগো’ ও ‘নেবুলা’ অ্যাওয়ার্ড। কল্পবিজ্ঞানের এই মহা কারিগর ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ব্রুকলিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।