"অ্যাডগার অ্যালান পো রচনাসমগ্র ২" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ আমেরিকার সাহিত্যিকদের আসরে নিজের যােগ্য আসন না পাওয়ায় অ্যাডগার অ্যালান পাে বাধ্য হয়ে সাংবাদিকতার কাজে নিজেকে নিয়ােজিত করলেন। তিনি ফিলাডেলফিয়া, রিচমন্ড আর নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করতে লাগলেন। আবার সাহিত্য-সমালােচনার কাজও পাশাপাশি চালাতে লাগলেন। বিয়ের পরও তিনি সুস্থ্য-স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারলেন না। ফলে অর্থকষ্ট তাকে আরও বেশি আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলল। এদিকে একের পর এক লেখা প্রকাশিত হওয়ায় তার খ্যাতি বৃদ্ধি পেতে লাগল সত্য, কিন্তু দৈন্যদশার ফল থেকে তিনি মুক্তি পেলেন না বা পাওয়ার চেষ্টাও করলেন না। মদের বােতল তার চির সঙ্গি হয়ে দাঁড়াল। ১৮৪৭ সালে স্ত্রী ভার্জিনিয়া ক্লেম দুরারােগ্য ক্ষয়রােগের শিকার হলেন। সেবই তার মৃত্যু হল। ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে পাে-ও লেখা ‘দ্য র্যাভেন অ্যান্ড আদার পয়েমস' কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এ কাব্যগ্রন্থই তাকে সাহিত্যের খ্যাতি এনে দেয়। এর কিছুদিন শুই প্রকাশিত হয় ‘টেলস অব মিষ্ট্রি অ্যান্ড ইমাজিনেশন’ নামক ছােটগল্পের বই। হস্য-রােমাঞ্চ আর মেরু-অভিযানের গা ছমছম-করা এ বইটি প্রকাশিত হবার পর সমালােচক ও পাঠক মহলে তাকে নিয়ে রীতিমত হৈচৈ পড়ে যায়। পৃথিবীর খ্যাতনামা সাহিত্য-সমালােচকদের মতে যুক্তরাষ্ট্রের সাহিত্য-ইতিহাসে এমন তুলনীয়, রােমাঞ্চ আর বিভীষিকা সৃষ্টি করা অন্য কোনাে লেখকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। আমেরিকার কবি ও গল্পকারদের জীবনী পর্যালােচনা করলে নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, কোনাে কবি বা গল্পকারের জীবনে এত বাঁক, এত জটিলতা, এত অন্ধকারাচ্ছন্নতা আর বিপর্যয় নেমে এসে প্রতিটি মুহূর্তকে এমন দুর্বিষহ করে রাখে নি। সংসারের নিরবচ্ছিন্ন অভাব অনটন আর একের পর এক তাঁর মধ্যে আশ্রয় নেওয়া চারিত্রিক দোষ তাঁর বহুমুখী প্রতিভাকে ক্রমেই ভেঁতা করে দিচ্ছিল। তার পরও তিনি প্রতিটি রহস্য, রােমাঞ্চ, গােয়েন্দা, ভৌতিক গল্প আর কবিতা রচনার মাধ্যমে যে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা কেবলমাত্র আমেরিকার সাহিত্যজগতেই নয়, সমগ্র বিশ্বের সাহিত্যের ইতিহাসে বিরলই বলা চলে।