"মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র-৩য় খণ্ড" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বাংলাদেশের জনগণের অহংকার ও গৌরব এ দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ। কেননা বাঙালি জাতির ধারাবাহিক স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার ফসল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধ ছিল আমাদের জাতিসত্ত্বা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আত্ম-অনুসন্ধানের লড়াই। এবং তাতে অবশ্যই মিশে ছিল অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সব বাঙালির পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আর মুক্তির আকাংখার বিস্ফোরণ। মুক্তিযুদ্ধ যে কোন জাতির জীবনে একটি গুরুতুপূর্ণ ঘটনাও বটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সারা বিশ্বে সৃষ্টি করেছিল ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। বিশ্বের মুক্তিকামী ও নির্যাতিত জনগণের পেয়েছিল অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযােগিতা। ইতিহাসের পাতায় অবিস্মরণীয় এই মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশে আমাদের নানা শিল্প-মাধ্যম যেমন : সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, চলচ্চিত্র ও চিত্রশিল্পে এসেছে প্রবল ও উজ্জ্বলভাবে। বিশিষ্ট লেখক ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে নির্ভীকভাবে ও নিরলসভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা ও লেখালেখি করে আসছেন। তাঁর বলিষ্ঠ লেখনিতে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নানান ধরনের মননশীল লেখা যা আমাদের সাহিত্যকে করেছে ঋদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের বিভিন্ন গবেষণা, প্রবন্ধ একত্রিত করে প্রতিবছর সুবর্ণ মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র প্রকাশ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর প্রকাশিত হলাে ড. মুনতাসীর মামুনের মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র-তিন বইটি এদেশের প্রকাশনায় সংযােজন করবে নতুনতম বিশিষ্টতা। বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবেই আমাদের এই প্রয়াস এবং স্বভাবতই আমাদের প্রত্যাশা পাঠকমাত্রই তা অনুভব করবেন খুব সহজেই।
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।