"নবীয়ে রহমত" বইটির 'অনুবাদকের আরয' অংশের লেখাঃ মহিমান্বিত প্রভু আল্লাহ রাব্দুল-আলামীনের দরবারে লাখাে কোটি হামদ ও শােকর, যিনি তাঁর এই অধম বান্দাকে তাঁরই প্রিয় হাবীব সাইয়েদুল মুরসালীন, খাতিমুন নাবিয়্যীন, শাফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন আহমদ মুজতবা মুহাম্মাদ মুসতফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অমর জীবনীগ্রন্থ ‘আসসীরাতুন-নাবাবিয়্যার' উর্দু তরজমা থেকে বাংলায় অনূদিত ‘নবীয়ে রহমত' বাংলাভাষী পাঠকের হাতে তুলে দেবার সৌভাগ্য দান করলেন। ১৪১৩ হিজরীর ১২ রবিউল-আউয়াল জুমুআর রাতে অধম এর অনুবাদে হাত দিয়েছিল। অবশেষে অনেক চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে আজ ১৪১৮ হিজরীর সেই একই ১২ রবিউল আউয়াল জুমুআর দিনে সে অনুবাদকের আরয লিখছে। রাহমানুর রাহীমের পক্ষ থেকে এই বিরল সৌভাগ্য দানের জন্য দীনাতিদীন অনুবাদক তাঁর মহান দরবারে আবারও হামদ ও শােকর পেশ করছে। একই সঙ্গে মীলানুননবী (সা.)-র এই মুবারক দিনে রহমতে দো‘আলম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের রওযায়ে আকদাসের উদ্দেশ্যে পেশ করছে অযুত দরুদ ও সালাম। সীরাত তথা নবী-চরিতমূলক গ্রন্থ রচনার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ ও সুপ্রাচীন। পৃথিবীর প্রধান প্রধান প্রায় সকল ভাষাতেই সীরাতগ্রন্থ রচনার ধারাবাহিকতা বর্তমান। তবে আরবীভাষার স্থান এ বিষয়ে শীষে। আস-সীরাতুন-নবাবিয়্যাঃ এই ধারাবাহিকতায় একটি উল্লেখযােগ্য সংযােজন। আরবীভাষায় রচিত এ গ্রন্থটি আরবজাহান থেকে প্রকাশিত হওয়ার পর এ যাবত এর দশটি সংস্করণ মুদ্রিত হয়েছে। আরবজাহানের অনেকগুলাে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি অন্যতম পাঠ্য। বর্তমান গ্রন্থের এ কেবল অসাধারণ জনপ্রিয়তারই প্রমাণ বহন করে না যে কোন লেখকের জন্য এটা অত্যন্ত শ্লাঘারও বিষয়। আর তা যদি লেখকের জীবদ্দশায় ঘটে তা হলে তা হয় লেখকের পক্ষে আরও গৌরবের। গ্রন্থটি পথিবীর অনেকগুলাে ভাষায় অনূদিত হয়ে ইতােমধ্যেই পাঠকমহলে সাড়া জাগিয়েছে। আমাদের জানা মতে, উর্দু ভাষায় লাখনৌ থেকে চারটি, করাচি থেকে দু'টি, ইংরেজী ভাষায় দু'টি এবং ইন্দোনেশীয়, তুর্কী ও হিন্দী ভাষায় এর একটি করে সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।