"পা কাটা পাপ্পু" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ অদ্ভুত, অন্য রকম একটা ছেলে পাপ্পু। বাপ্পী দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে তাকে বলল, তােমার কথা শুনে অন্য রকম মনে হচ্ছে পাপ্পু তােমাকে। ভালাে লেগেছে আমার। আমি কি তােমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি? যাকে বলে বন্ধুত্বের বন্ধন। ক্রাচ দুটো বেঞ্চের সঙ্গে ঠেকিয়ে রেখে পাপ্পুও দু’হাত প্রসারিত করল। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে রইল কিছুক্ষণ। তারপর পাপ্পুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বাপ্পী ফিসফিস করে বলল, ‘মাঝরাতে শশান ঘাটে একা একা বসে থেকেছ কখনাে? না। তবে তুমি যদি বসে থাকো কখনাে, তাহলে আমিও বসে থাকতে পারব।' স্পষ্ট গলায় বলল পাপ্পু। দু’হাত দিয়ে পাপ্পুর দু’কাঁধ চেপে ধরে সােজা হয়ে দাঁড়াল বাপ্পী, “থ্যাঙ্ক ইউ"। বেঞ্চে পাপ্পুকে বসিয়ে দিয়ে পাশে বসল সেও, কখনাে কারাে গাছের আম কিংবা লিচু চুরি করেছ? না। তবে এটাও পারব। মারামারি করেছ কখনাে কারাে সঙ্গে? ‘না, করিনি। তবে প্রয়ােজন হলে করব। সে আমাকে দুটো ঘুসি মারতে পারে, কিন্তু আমি মনে করি আমার একটা ঘুসিই যথেষ্ট। একবার পড়ে গেলে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। ‘তােমার তাে দৌড়াতে একটু কষ্ট হবে। ‘দৌড়ানাের প্রশ্ন আসছে কেন!' চোখ-মুখ কিছুটা কঠিন করে ফেলল পাপ্পু, যারা ভীরু তারা পালায়। যারা সাহসী তারা রুখে দাঁড়ায়। বুকের ভেতর যেমন সাহস থাকা প্রয়ােজন, তেমন থাকা উচিত সততা। পাপ্পুর কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে যায় বাপ্পী, চমকে উঠল পাশে থাকা অন্য সব বন্ধু।
বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।