“শ্রেষ্ঠ উপন্যাস" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ এখানে মঈনুল আহসান সাবেরের যে কটি উপন্যাস অন্তর্ভূক্ত হয়েছে, তার সব কটিই পরিসরের দিক থেকে ছােট। কিন্তু সাবের সেই বিরল সাহিত্যিকদের একজন, যে মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ ও শ্ৰেণী-পার্থক্য নির্ণয়ের মাধ্যমে, মানুষের জীবন-প্রবাহকে চেতন-অবচেতন উপলব্ধির মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক ইর্ষণীয় দক্ষতা রাখেন। তার অনেক উপন্যাসে স্বপ্ন ও বাস্তব হাত ধরাধরি করে হাঁটে ও অনিবার্য পরিণতির দিকে এগিয়ে। যায়, তবে অনিবার্য পরিণতি হলেও সাবেরের নির্মোহ উপস্থিতির কারণে পাঠকের পক্ষে অনুমান করা সম্ভব হয় না গল্প আসলে তাকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অনেক লেখক যখন কাহিনিকার, সাবের তখন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তিনিও একটি কাহিনি সাজান বটে, তার মতাে করে, তবে তার মধ্যে অনায়াসে মিশিয়ে দেন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, মানুষের মনােজগত ও তার নানা আচরণ। তিনি কখনাে ভুলে যান না অর্থনীতি, শ্রেণী-পার্থক্য, অবদমন ও আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা কী বিশাল ভূমিকা পালন করে আমাদের রােজকার জীবনে। পাশাপাশি সমাজের অপরিণত, অগঠিত চেহারাটিও তার চোখ এড়িয়ে যায় না। তিনি জানেন, তিনি কী লিখছেন। এ গ্রন্থের আটটি উপন্যাস এক একটি স্বতন্ত্র ভূখণ্ডের মতাে। তারা ঘটনায়, বর্ণনায়, অনুভবে, পরিণতিতে একটি থেকে আরেকটি আলাদা। তবে ভূখণ্ডের একটিও শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছে অপরিচিত থেকে যায় না। বরং সাবের এমনভাবে পরিচিত করিয়ে দেন, গভীর এক বােধের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা স্তব্ধ ও বিমূঢ় বােধ করি। আর, আমাদের এই বাংলাদেশেই যদিও তাদের বিচরণ, সেই পরিসর ছাড়িয়ে তারা বৈশ্বিক ও চিরকালেরও হয়ে ওঠে।
মঈনুল আহসান সাবেরের জন্ম ঢাকায়। ২৬ মে ১৯৫৮। পৈতৃক ভিটে একদা বরিশাল ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পিরােজপুর। দেশের বহু বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে, যাওয়া হয়নি ওই পিরােজপুর। বাবার ফেলে আসা ভূমি সাজানাে আছে সাবেরের কল্পনায়। জন্মের পর এই ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। সংসার জীবনও। যদিও এক সময় ইচ্ছা ছিল, থিতু হবেন না, পথে পথে থাকবেন, আজ এখানে তাে কাল ওখানে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তিনিও সেই ওদের মতাে, যাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত না টেনেছে, তার চেয়ে বেশি টেনেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বর। বড়দের জন্য প্রথম লেখা ১৯৭৪-এ। প্রকাশিত হয়েছিলাে সে সময়কার সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। তারপর ৪০ বছর ধরে এই একটিই কাজ, বিরতিসহ বিরতি ছাড়া। প্রথম বই গ্রল্পগ্রন্থ “পরাস্ত সহিস বেরিয়েছিল ১৯৮২ সালে। চাকরি না করে উপায় নেই। তাই করছেন, সাংবাদিকতা। এখন অবশ্য বেকার। বেকার থাকার অভিজ্ঞতা তার আছে। বাসনা বেকারই থেকে যাওয়ার। বেড়াতে ভালােবাসেন। একা থাকতেও পুরস্কার পেয়েছেন সামান্য কয়েকটি। বাপি শাহরিয়ার শিশুসাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। স্ত্রী নাহিদ নিগার, দু পুত্র আহসান সেনান ও আহসান সাজিদকে নিয়ে তার সংসার।