"বিশ্বের শ্রেষ্ঠ লেখকদের সাক্ষাৎকার" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ সাহিত্যিকরা কেন লেখেন? কোন অনুপ্রেরণায় জীবিকা অর্জনের নিয়মিত কাজ করেও অবসর সময় সাহিত্যচর্চার মত শ্রম ও কষ্টসাধ্য একটা বিষয়ে নিজেকে নিমগ্ন রাখেন? কেউ কেউ বা কেনই জীবিকা অর্জনকেও তুচ্ছ জ্ঞান করে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন সাহিত্য চর্চায় নিয়ােজিত রেখে? কোন দূরাগত স্বপ্ন তাদেরকে অন্য মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে? সাহিত্য চর্চা রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক ক্ষেত্রে কোন ইতিবাচক ভূমিকাটাই বা রাখে? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্যই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকবৃন্দের সাক্ষাৎকার পাঠ করেছি। যে সব প্রশ্ন আমাকে নিয়ত বিব্রত করে ফিরতাে, বিশেষত উচ্চশিক্ষিত বন্ধু-প্রতিবেশীদের প্রশ্ন, সাহিত্য চর্চার ফলে কী লাভটা হয়? এ প্রশ্নের উত্তর কোন কোন গ্রন্থ পাঠ করে পেয়ে গেছি, আবার কখনাে নিজে ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারিনি শুধু মনে হয়েছে, বােধহয় তারা ঠিকই বলে, কী কাজে লাগবে এই সময় ও মেধার অকাতর ব্যয়? কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি খুঁজে পেয়েছি এসব প্রশ্নের উত্তর, কেন এই সাহিত্য চর্চা? কেন বিশ্বের বিশেষ কিছু মানুষ সব জাগতিক সুখ সুবিধাকে একপাশে সরিয়ে রেখে ক্রমাগত ছুটে চলছে পরম সত্য ও কল্যাণের সন্ধানে, কখনাে নিজেকে খুঁড়ে খুঁড়ে, কখনাে ইতিহাস ঐতিহ্যকে ওলটপালট করে সন্ধান করে, কখনাে মানবাত্মার ক্রন্দনকে শব্দগুচ্ছে ধরতে চেয়ে। একজন সাহিত্যিকের জীবন কি খুব সুখের হয়? হয় না, কিছু সাহিত্যিক সম্মান হয়তাে পায়, কেউ কেউ কিছু অর্থও, কিন্তু সেজন্য সে তার সব জাগতিক সুখ, পরিবার, এমনকী সন্তানকেও দূরে ঠেলে দিয়ে বুকে আঁকড়ে ধরেন শিল্পকে। সেসব হৃদয়হেঁড়া সব কাহিনী উঠে আসে তাদের সঙ্গে সাহিত্য অনুরাগী অন্য কোন শিল্পী বা সাংবাদিকের কথােপকথনে। সেজন্যই যে কোন সাহিত্যিকের কথােপকথন বা সাক্ষাৎকার আমার খুব প্রিয়। একটি মহৎ শিল্প সৃষ্টি হবার পেছনে শিল্পীর কোন অন্তবেদনা কাজ করে তার কিছুটা হলেও ধরা পরে এই কথােপকথনের মধ্য দিয়ে। ২০০৭ সাল থেকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ যারা পুরস্কারের মানদণ্ডে শ্রেষ্ঠ (এ ক্ষেত্রে কেউ হয়তাে কূট প্রশ্ন তুলতে পারেন, যারা পুরস্কৃত হনননি তারা কি শ্রেষ্ঠ নন? অবশ্যই, তাদের অনেকে পুরস্কৃতদের চেয়ে শ্রেষ্ঠতরও বটে, কিন্তু এ গ্রন্থ শুধু পুরস্কারপ্রাপ্তদের সূচীবদ্ধ করা হয়েছে) তাদের সাক্ষাৎকার পাঠ করি ও অনুরাগবশঃত অনুবাদ করতেও শুরু করি। বেশ কিছু সাক্ষাৎকার জাতীয় দৈনিকের পাতায় স্থানও করে নেয়। সেসব অনুবাদকর্ম থেকে ১০টি বাছাই করে এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত করা হল।
তিনি তরুণ কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। সমান দক্ষতা রয়েছে কথাসাহিত্য ও অনুবাদে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ সহাস্য বিষন্নতা প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। প্রথম উপন্যাস আরমান শেখ ও তার শেকড় সংক্রান্ত জটিলতা (২০০৮)-এর জন্য পেয়েছেন খুলনা রাইটার্স্ পদক ২০০৯। তৃণমূল মানুষকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন। প্রান্তিক সাংবাদিকতার সুবাদে পেয়েছেন প্রাকৃতজন পুরস্কার ২০০১। তাঁর উপন্যাসের প্রতি পরতে মানুষের জীবনবোধ, দ্বন্ধ, দর্শ্ন, জীবনকে নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেখার প্রবণতা লক্ষনীয়। এই সঙ্গে প্রবল আবেগময় ভাষার সহজ সরল বুননে পাঠককে ধরে রাখেন উপন্যাস শেষ না হওয়া পর্য্ন্ত। একাধিক বই পুনঃমুদ্রিত হয়েছে। এ লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৬টি।