বাংলা ভাষা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা হিসেবে বিশ্ব-সমাজে স্থান করে নিয়েছে। বিশ শতকের সূচনাকালে বাংলা ভাষার একটি নিজস্ব ব্যাকরণ রচনা এবং এ বিষয়ে গবেষণার কথা বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, রামেন্্রসুন্দর ত্রিবেদী প্রমুখ পন্তিত-কবি-সাহিত্যিক।কিন্ত বিশ শতকের শেষ অবধি প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা সম্ভব হয়নি। তারপর দুই খণ্ডে বাংলা ভাষার প্রথম স্বকীয় “বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ” প্রকাশিত হওয়ার পর গ্রন্থটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ব্যাকরণ-অনুসন্ষিৎসু এবং বোদ্ধা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর কিছুটা পরিমার্জিত আকারে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হলে বইটি প্রকাশের পরপরই সাধারণ পাঠক, ছাত্রসমাজ, সাংবাদিক এবং দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীদের কথা চিন্তা করে এর একটি সংক্ষিপ্ত ব্যবহারিক সংস্করণ প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এতে মূল গ্রন্থের আলোকেই প্রথম খণ্ডের একটি সহজ রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এখানে ধ্বনিবিজ্ঞান, ধ্বনিতন্ত, রূপতত্ত,বাক্যতত্ত্ব ইত্যাদি যেমন সাজানো হয়েছে-তেমনি প্রচলিত ব্যাকরণের কিছু বিষয়ও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রচলিত ব্যাকরণ গ্রন্থ পাঠে অভ্যস্ত পাঠকেরা এ বই পড়ে প্রথাগত ধারণা থেকে আধুনিক ব্যাকরণচর্চার পর্যায়ক্রমিক উচ্চতর পর্যায় পরিক্রমণেও উৎসাহিত বোধ করবেন। সহজবোধ্য এই গ্রন্থটি বাংলা ভাষার প্রমিত, কথ্য, লিখিত এবং উপভাষা সম্পর্কে ধারণা দেবে এবং আমাদের প্রিয় ভাষাটির একটি সহজ ও স্বচ্ছ বিজ্ঞানভিত্তিক রূপ মেটাবে বলেই বিশ্বাস।
রফিকুল ইসলাম (১৯৪৩-) চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া করেন। ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদনা করেন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টরে। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দীশিবিরে নির্যাতিত হন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। ‘নজরুল নির্দেশিকা’, ‘ভাষাতত্ত্ব’, ‘নজরুল জীবনী’, ‘শহীদ মিনার’, ‘বাংলা ভাষা আন্দোলন’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর’, ‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু কলোকোয়্যেল বেঙ্গালি’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ তিনি আরো অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।