মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী আত্মজীবন ভূমিকা ও সম্পাদনা : শামসুজ্জামান খান
মওলানা মনিরুজ্জামামান এছলামাবাদী (১৮৭৫-১৯৫০) বাংলাদেশের এক খ্যাতর্কীর্তি আলেম, স্বাধীনতা সংগ্রামী, জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক নেতা ও সমাজ-সংস্কারক হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসলামী মুসলিম ধর্মীয় ঐতিহ্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক ধারার প্রতিনিধি হলেও মুক্তদৃষ্টি ও তৎকালীন ভারতের জাতীয় স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকায় পাকিস্তান আন্দোলন নয় সুভাষ বসুর ‘আজাদ হিন্দ’ ফৌজের অন্যতম নেতার আসন লাভ করেন এবং সেজন অত্যাচারিত, নিগৃহিত ও ব্রিটিশ শাসকদের হাতে কারাযন্ত্রণা ভোগ করেন। তিনি জমায়েতে ওলামায়ে হিন্দ, কৃষক প্রজা দল ও খেলাফত আন্দোলনের নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও আজাদ হিন্দ ফৌজের মাধ্যমেই তাঁর রাজনৈতিক চেতনার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটান। সেজন্যই তাঁকে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী এক জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতা হিসাবে আমরা সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। ধর্ম তাঁর কাছে ছিলো জীবনের গভীরতর অনুভব-উপলব্ধির মাধ্যম এবং সততা, ন্যায়পরায়ণতা, ও স্বাধীনচিত্ততার মূর্ত প্রতীক। বোধের এই মৌলিক গভীরতার জন্যই প্রবল ধর্ম নিষ্ঠ হয়েও আধুনিক জাতীয়তাবাদী হতে তাঁর কোন অসুবিধা হয়নি। সেজন্যই ইসলামী ও মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়নে তিনি আজীবন প্রয়াস চালিয়ে গেছেন। তাঁর ‘আত্মজীবন’ গ্রন্থটি তাই আমাদের বর্তমান সমাজ বাস্তবতা ও তার চিন্তা-ধারায় প্রেক্ষাপটে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে। এখানেই এ বইয়ের বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
মওলানা মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী জন্ম : ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ ১২৩৪ মঘি। চট্টগ্রাম জিলার পটিয়া থানার আরলিয়া গ্রামে। মৃত : ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ ১৪১২ মঘি। পিতা : মুন্সী মতিউল্লাহ পণ্ডিত। মাতা : রহিমা বিবি। শিক্ষা ও কর্মজীবন : ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে হুগলী মাদ্রাসা হইতে উল্লা পাস এবং রংপুর মুন্সীপাড়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে রংপুর কুমেদপুর মাদ্রাসায় হেড মৌলভী পদে যোগদান। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে কোলকাতা শিক্ষা কনফারেন্স ও কংগ্রেসে যোগদান। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী শিক্ষা কনফারেন্স এর আয়োজক। ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধ ও বিংশ শতকের প্রথমার্ধ্বে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যে একটি শক্তিশালী বিপ্লব ধারা গড়ে ওঠে। এঁদের মধ্যে অনেকেই চিন্তাবিদ, বাগ্মী, রাজনীতিক ও সাহিত্যিক হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তাঁদের মধ্যে মৌলিক চিন্তন প্রক্রিয়া, পাণ্ডিত্য, গভীরতর মানবিকবোধ, স্বাধীনতাপ্রীতি বিকশিত হয়েছিল। মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী এই ধারার এক প্রাগ্রসর প্রতিনিধি ছিলেন।
Mohammad Moniruzzaman Aslamabadi- (১৮৭৫-১৯৫০) চট্টগ্রাম জিলার পটিয়া থানার আরালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দে হুগলী মাদ্রাসা হতে উলা পাস করেন এবং রংপুর মুন্সীপাড়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। এরপর ১৮৯৭ খ্রীষ্টাব্দে রংপুর কুমেদপুর মাদ্রাসায় হেড মৌলভী পদে যোগদান করেন। ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে কলিকাতা শিক্ষা কনফারেন্স ও কংগ্রেসে যোগদান করেন। ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দে চট্টগ্রাম ভিক্টোরিয়া হোস্টেল প্রতিষ্ঠা করেন ও সীতাকুণ্ড সিনিয়র মাদ্রাসায় যোগদান করেন। ১৯০২ খ্রীষ্টাব্দে তিনি রেঙ্গুন যাত্রা করেন। ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দে রাজশাহী শিক্ষা কনফারেন্স-এর আয়োজক ছিলেন তিনি। এই উপমহাদেশের ইতিহাসে যে কয়েকজন আলেম ও মৌলানা প্রসিদ্ধি অর্জন করেছেন তাঁদেরই একজন মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী। একাধারে স্বাধীনতা সংগ্রামী, জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক নেতা ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠিত। রাজনীতিতে, শিক্ষা প্রসারে এবং বঞ্চিতজনের বঞ্চনা মোচনে তাঁর কীর্তি চির অম্লান।