অনেক আত্মজীবনী বের হচ্ছে এখন বাংলাদেশ থেকে। শুরু হয় আরো অনেক কিছুর মতো ঊনিশ শতাব্দীতে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচরিত বাঙালি পাঠক মাত্রেরই পরিচিত।
এই ধারারই সা¤প্রতিক কিন্তু ব্যতিক্রমী একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন আকবর কবির। ব্যতিক্রমী এজন্যে যে এই আত্মকথা কেবল লেখকের জীবনবৃত্তান্ত নয়-এদেশের একটি পরিবারের কয়েক পুরুষের বংশানুক্রমিক ইতিবৃত্ত। ঠিক এরকম বই সাধারণত আমাদের চোখে পড়ে না। লেখক নিজে সবিনয়ে বইটিকে বলেছেন ‘পারিবারিক পরিচিতি বই’। পারিবারিক বটে, তবুও পারিবারিক বলয় অতিক্রম করে সামাজিক ইতিহাসের এক স্মরণীয় সাক্ষ্য হয়ে উঠেছে এই গ্রন্থ। বিশেষত আকবর কবিরের সহোদরগণ সকলেই কম- বেশি কৃতি ও বিশিষ্ট-যাঁদের মধ্যে হুমায়ুন কবির উজ্জ্বলতম।
আকবর কবিরের নিজস্ব জীবনধারা এবং ভাবনা- বেদনার সঙ্গে তাঁর আদর্শিকতা যুক্ত হয়ে বইটি একটি সপ্রাণ, আকর্ষক ও মহার্ঘ্য ইতিহাসে রূপান্তরিত হয়েছে।
আকবর কবিরের আত্মকথা-র মধ্যে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে বংশানুবৃত্তি ও পারিবারিক পরিচয়ের বাইরেও একটি আত্মআদর্শে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তির দেশ-কাল-সমাজ-ভাবনা রূপায়িত।
আকবর কবির সম্পাদনা : আবদুল মান্নান সৈয়দ
বিচিত্র বর্ণাঢ্য স্বাতন্ত্র্যমতি জীবন অতিবাহিত করেছিলেন আকবর কবির। তাঁর জন্ম পিতার কর্মস্থল ফেনিতে। পিতা : আবুল খায়ের কবিরউদ্দিন আহমদ। মাতা : সাজেদা বেগম। পিতৃভূমি ফরিদপুর। বিখ্যাত কবির পরিবারের সন্তান। দুই বোন ছ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সপ্তম। পড়াশোনা বাংলাদেশেরও কলকাতার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। ম্যাট্রিক পাশ করেন কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে আই.এস-সি উত্তীর্ণ হন। ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ইংরেজিতে বি.এ অনার্স পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ। অধ্যাপনা শুরু করেন বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে। পরে কলকাতার সরকারি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটে এবং হুগলির মহসিন কলেজে। তারপর কলকাতা ও দার্জিলিঙে সিভিল সাপ্লাইজ বিভাগে। দেশ বিভাগের পর চলে আসেন এদেশে। কাজ করেন বিভিন্ন জেলায়। সমাজকল্যাণ দপ্তরের প্রথম পরিচালক ছিলেন। করাচি, রাওয়ালপি ও ঢাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর মূলত সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। মধ্যবর্তী কিছুকাল উপদেষ্টাও ছিলেন। বিভিন্ন কর্মসূত্রে বহু দেশ সফর। শেষ জীবন গ্রামেই কাটিয়েছেন সমাজসেবামূলক কর্মকা-।