কোনো দেশ বা জাতির গন্তব্য নির্ধারণে তার শিক্ষাব্যবস্থাই মূল ভূমিকা পালন করে। সেদিক থেকে, লেখক মনে করেন, আমরা এক দিকদিশাহীন যাত্রায় রয়েছি। তাঁর মতে জাতি গঠন প্রচেষ্টায় সহায়তা করার পরিবর্তে আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা বরং তাকে আরও বাধাগ্রস্ত করছে। দু-দুবারের পরাধীনতা মুক্তির পরও আজও আমাদের দেশে আমরা সেই পুরনো ঔপনিবেশিক আমলের শিক্ষাব্যবস্থাই সামান্য হেরফের ঘটিয়ে চালু রেখেছি। বরং ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থারও যা কিছু ইতিবাচক দিক ছিল, তাতেও আলোকিত মানুষ তৈরির যেটকু সুযোগসুবিধা, মুক্তবুদ্ধি চর্চার যেটুকু ফাঁকফোকর ছিল; প্রথমে তেইশ বছরের পাকিস্তানি শাসনে ও পরে তেতাল্লিশ বছরের বাংলাদেশ আমলে নানা অব্যবস্থা, দুর্নীতি ও ভ্রষ্টাচারের কবলে পড়ে তাও ইতিমধ্যে আমরা খুইফে ফেলেছি। এই বইয়ের প্রবন্ধগুলোতে নানা যুক্তি ও তথ্য সহকারে লেখক সে বক্তব্যই তুলে ধরেছেন। শিক্ষা পরিকল্পনা, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষকদের মর্যাদা ও দায়িত্ব, শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ, ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি প্রভৃতি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রায় সকল প্রসঙ্গ। কমবেশি আলোচিত হয়েছে গ্রন্থভুক্ত রচনাগুলোতে। অন্যত্র যেমন তেমনি এই বইয়ের প্রবন্ধগুলোতেও লেখকের প্রবল যুক্তি, তথ্যনিষ্ঠা ও শানিত গদ্য পাঠককে বিষয়ের গভীরে টেনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে নতুন করে কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে প্ররোচিত করবে।
মােরশেদ শফিউল হাসান প্রাবন্ধিক, সমালােচক, গবেষক ও কবি। জন্ম: ১৯৫৩ সালের ২১ মার্চ (৭ চৈত্র ১৩৬০)। লেখাপড়া করেছেন চট্টগ্রামের পলােগ্রাউন্ড রেলওয়ে স্কুল, সরকারি কলেজিয়েট স্কুল ও চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি। দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ঢাকার অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণের পর বর্তমানে একটি শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শক হিসেবে যুক্ত আছেন। কর্মজীবনের শুরুতে বেশ কিছুকাল বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। দৈনিক গণকণ্ঠ ও বাংলার বাণীর সহকারী সম্পাদক ছিলেন। এখনও দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। স্বনামে ও বেনামে এ যাবৎ প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা অর্ধশতের অধিক। লেখাকে পেশা বা নেশা কোনােটাই নয়, সামাজিক দায় পালনের উপায় বলে মনে করেন। দলীয় ও গােষ্ঠী আনুগত্যের বাইরে স্বাধীন চিন্তার জন্য পরিচিত।