সমকালীন ব্যক্তিত্ব নিয়ে উপন্যাস লেখা দুরূহ তো বটেই, কখনো কখনো লেখকের জন্যে বিব্রতকরও বটে। কথাসাহিত্যে এই অ্যান্টি-হিরোর কালে বড়ো মাপের ব্যক্তিত্বকে নায়ক করে উপন্যাস লেখা ব্যতিক্রমধর্মী সাহসের কাজ। অ্যান্টিহিরোদের দুর্বলতা ও অবক্ষয়ের দৌরাত্মে হিরোরা শক্তি ও সাহস নিয়ে কাচুমাচু হয়ে থাকে। হাসনাত আবদুল হাইয়ের প্রেরণা মানুষের শক্তি, মানুষের ক্ষমতা ও মানুষের সাহস। প্রতিভাবান, শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব নিয়ে উপন্যাস লেখার উদ্যোগ হাসনাত আগেও নিয়েছেন এবং তাঁদের আবেগ ও প্রেরণা, স্বভাব, ভাবনা এবং ক্ষোভ ও বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার জন্যে উপন্যাসের প্রচলিত রীতির বাইরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে হাসনাত আলাপ করেন, দিনের পর দিন তাঁদের কথা শোনেন। তিনি নিজেও কথা বলেন, কেবল প্রশ্ন করা নয়, মতামত দেন, মন্তব্য করেন এবং এইসব সংলাপেই পাঠক আরজ আলীর সংশয়, তাঁর বিদ্যাচর্চা, সংকট, তাঁর লেখা, লেখা ছাপা, বই প্রকাশ, বইয়ের প্রচার প্রভৃতি বিষয়ে জানতে জানতে নায়ককে চিনতে পারেন। বলতে গেলে এইসব সংলাপের বিন্যাসেই গড়ে ওঠে উপন্যাস। - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
হাসনাত আবদুল হাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু। এরপর সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। দীর্ঘ চব্বিশ বছর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের পর তিনি বাংলাদেশ সরকারের সচিব থাকাকালীন ১৯৯৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু। তখন থেকে আজ অবধি প্রতিটি প্রধান পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ছোট গল্প ও উপন্যাস। এ পর্যন্ত কুড়িটি উপন্যাস, চারটি ভ্রমণ কাহিনী গ্রন্থ, একটি নাটক সংকলন এবং একটি প্রবন্ধের বই প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বই : নভেরা, সুলতান, ট্রাভেলগ, ইন্টারভিউ, সাফারী, সোয়ালো। অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, শেরে বাংলা পুরস্কার, স্যার জগদীশচন্দ্র পুরস্কার, মওলানা আকরম খাঁ পুরস্কার, এস এম সুলতান পুরস্কার, ড. ইবরাহিম পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার ছাড়াও পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৬), একুশে পদক (১৯৯৬)।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।