‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইয়ের ফ্ল্যাপঃ ‘দ্য আলকেমিস্ট' বইটির কাহিনী একটি বালককে নিয়ে যে ভেড়ার রাখাল । সে একটা স্বপ্ন দেখে যে তার জন্য মিশরের পিরামিডের কাছে গুপ্তধন রাখা আছে। স্বপ্নে একটি শিশু তাকে সেটা বলেছে। টারিফার এক বৃদ্ধা মহিলার কাছে এসে সে তার দেখা স্বপ্নের ব্যাখ্যা চায় । মহিলাও তাকে বলে যে তার সম্পত্তি মিশরের পিরামিডের কাছে আছে। টারিফায় এক বৃদ্ধলােকের সাথেও তার পরিচয় হয় যে সালেমের রাজা। বৃদ্ধ রাজাও বলে তার সম্পত্তি মিশরে পিরামিডের কাছে রাখা আছে। সে সেই স্বপ্নকে বিশ্বাস করে রাখালী জীবন ছেড়ে গুপ্তধন অনুসন্ধান করতে মিশরে যেতে চায়। মিশর আফ্রিকায় অবস্থিত। তাকে আফ্রিকা যেতে হবে । আফ্রিকার বন্দর শহর তানজিয়ারে সে আসে । তানজিয়ারে এসে সে প্রথমে তার টাকা-পয়সা হারায়, তারপর কাচ-বণিকের দোকানে কাজ করে টাকা অর্জন করে। সেখান থেকে সে দেশে ফিরে যাবার চিন্তা করে । কিন্তু আবার সেই স্বপ্ন মিশরের পিরামিডের কাছে যাবার-যেখানে তার গুপ্তধন আছে। সে কাফেলায় মরুভূমি অতিক্রম করে মিশর যাবে । মরুদ্যানের মধ্যেই সে তার প্রেমিকার খোজ পায়, একজন আলকেমিস্টের সাথে পরিচয় হয়, একজন উটচালকের সাথে কথা হয়। এই যে পরিচয় আর তার অভিজ্ঞতা তাকে অন্যরকম মানসিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে, যেখানে সে বাতাসের সাথে কথা বলতে পারে, কথা বলতে পারে সূর্য, বালি এমনকি প্রকৃতি সবকিছুর সাথে…
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।