"দেশভাগের অর্জন : বাঙলা ও ভারত (১৯৪৭-১৯৬৭)" বইয়ের ভূমিকা: ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে তাদের ভারত সাম্রাজ্য ত্যাগ করে চলে যায়। যাওয়ার আগে তারা ভারতকে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ করে। ওই ঐতিহাসিক দেশভাগের অংশ হিসেবে ব্রিটিশ ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত দুটি প্রদেশ বাঙলা ও পাঞ্জাবকে উত্তরাধিকারী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। বাঙলার প্রায় দুইতৃতীয়াংশ অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তানের একটি প্রদেশ পূর্ব বাঙলা গঠিত হয়। পাকিস্তানের অন্য অংশ থেকে এক হাজার মাইলেরও বেশি দূরত্বে অবস্থিত পূর্ব বাঙলা পরে এর প্রধান অংশীদার থেকে আলাদা হয়ে সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে। প্রাচীন বাঙলার অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ, যার মূল এলাকা পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত, ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পরিণত হয়।
এই বইয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও স্বাধীন ভারতে দেশভাগের ব্যাপক ফলাফল নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর দুই দশকের মধ্যে দেশভাগের প্রভাব ছিল অত্যন্ত জটিল এবং ব্যাপক যা পন্ডিতগণ এ যাবত স্বীকার করেননি; ওই কুড়িটি বছর ছিল ভারতের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। বাঙলা ও ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে দেশভাগের কারণে অনেক পরিবর্তন হয় যা ছিল অপ্রত্যাশিত ও সুদূরপ্রসারী। এই গবেষণায় ওই পরিবর্তন কেন হয়েছিল তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে দেশভাগের ফলে অনেক নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের সীমান্তও নতুন করে চিহ্নিত হয়েছে। এর ফলে অনেক লােক উচ্ছেদ হয়েছে যা এখনাে ভালােভাবে উপলব্ধি করা হয়নি। বাঙলা ভাগের পরিণাম নিয়ে গবেষণায় কুড়ি শতকে সৃষ্ট অনেক নতুন রাষ্ট্র সম্পর্কে আলােচনায় কিছু বিরক্তিকর প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গ কিভাবে তার বিশেষ সীমানা পেয়েছে তা উদঘাটনে এমন ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা হয় যে, ওইসব নতুন রাষ্ট্রের সীমানা কারাে ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল অথবা দুর্ঘটনাজনিত ছিল। দেশভাগের ফলে বাঙলা ও ভারতে যে গভীর পরিবর্তন হয়েছে তা থেকে দেখা যায় যে, নতুন সীমান্ত কিভাবে তাদের রাষ্ট্র-শাসন ব্যবস্থা গঠনে সহায়ক হয়েছে। র্যাডক্লিফ লাইনের বিপরীত দিকে যে সব লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও মুসলিম নিজেদেরকে দেখতে পেয়েছিল তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল—ওই র্যাডক্লিফ লাইন বাঙলাকে ভাগ করে দেয়। বিভক্ত জনগণের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নতুন জাতি রাষ্ট্রগুলিতে ধর্মীয় বা সংখ্যালঘু মানুষের মর্যাদায় নির্বাসিত লােকদের ক্ষেত্রে দেশভাগ কিভাবে ব্যাপক ধ্বংসের কারণ হয় তার একটি হৃদয়গ্রাহী দৃষ্টান্ত হলাে বিভক্ত বাঙলা। এ বই তিন ভাগে বিভক্ত, প্রতিটি ভাগেই একটি মূল বক্তব্য আছে: বাঙলার ভাগ যারা দাবি করেছিল তাদের আশা ও সত্যিকার প্রাপ্তির মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান।
পুরাে নাম আবু জাফর মােঃ ইকবাল (জন্ম ১৯৪৮ যশাের); আবু জাফর লেখক নাম। যশাের জেলার চৌগাছা উপজেলার কয়ারপাড়া গ্রামে জন্ম। কয়ারপাড়া প্রাইমারি স্কুল ও চৌগাছা হাইস্কুলে লেখাপড়ার পর যশাের এম এম কলেজ থেকে তিনি স্নাতক (১৯৬৬) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) (১৯৬৯) ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে সরকারী চাকুরিতে যােগদান এবং ২০০৬ সালে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর রচিত বাংলা ও ইংরেজি গ্রন্থের মধ্যে আছে মওলানা আকরম খাঁ - এ ভারসেটাইল জিনিয়াস, মওলানা আকরম খাঁ (সংকলন ও সম্পাদনা), মুসলিম ফেস্টিভ্যালস ইন বাংলাদেশ, মুসলিম উৎসব, মােগল যুগের বিচার, রাষ্ট্রদর্শনে মুসলিম মনীষা, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস (১৭৫৭-১৮৫৭) এবং রসূল মুহাম্মদ (স) অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে আছে ঃ মহানবীর শাশ্বত পয়গাম (আবদুর রহমান আযযাম), বিশ্বনবী মুহাম্মদ (স) (যায়নুল আবেদীন রাহনুমা), মহানবীর জীবন আলাে (মার্টিন লিংগস), কূটনীতি ও ইসলাম (আফজাল ইকবাল), মুসলিম আন্তর্জাতিক আইন (মজীদ খান্দুরী সম্পাদিত), নাহজুল বালাগা (হযরত আলীর ভাষণ, চিঠিপত্র ও উপদেশ), বীর ও বীরবন্দনা (টমাস কার্লাইল), ট্রেন টু পাকিস্তান (খুশবন্ত সিং), বাঙলা ভাগ হ’ল (জয়া চ্যাটার্জী), কালের সাক্ষী ঢাকা (এ.এইচ. দানী)। প্রকাশের অপেক্ষায় : ডেমােক্রেটিক বিহেভিয়ার ও বাংলাদেশ পারসপেক্টিভ, বঙ্গভবনে দশবছর, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ (মাহাথির মােহাম্মদ, অনুবাদ), বাঙলার ইতিহাস (চার্লস স্টুয়ার্ট, অনুবাদ)।