"সিরাজউদ্দৌলা থেকে শেখ মুজিব" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: পলাশীর চক্রান্তে পরাজিত হলে নবাব। সিরাজউদ্দৌলা নিরুপায় হয়ে স্ত্রী ও কন্যাসহ ভাগলপুরের উদ্দেশ্যে পলায়ন করেন। কিন্তু পথিমধ্যে রাজমহলে রাত কাটাতে গিয়ে ধরা পড়েন। তাঁকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় মুর্শিদাবাদে এনে হত্যা করা হয়। অথচ সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বেদনাময় নাটকের প্রধান অভিনেতাদের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম যিনি প্রতারণার আশ্রয় নেননি এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের খাতিরে নিজেদের দেশ বিদেশীয়দের কাছে বিক্রয়ের নীচতা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় এবং মৃত্যুর ফলেই বাংলায় ইংরেজ রাজ্য প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপিত হয়। আবার লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের আজ আমরা গর্বিত অধিবাসী তার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা এবং তিনি তা অর্জন করেছিলেন ধাপে ধাপে। বাঙালি। জাতীয়তাবাদ ঔপনিবেশিক আমলে অঙ্কুরিত হলেও এর সার্থক রূপ পায় শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। তাঁর ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি ভিত্তিক স্বায়ত্ত শাসনের আন্দোলন থেকেই উদ্ভূত হয় বাঙালি। জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে স্বাধীনতার দাবি। বাংলা ও বাঙালিকে ভালােবাসার কারণেই জনগণ তাকে ‘বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করেছিল। বাংলার এই সর্য সন্তান, এই সাহসী পুরুষকে কাপরুষের মতাে হত্যা করে কতিপয় উচ্চাভিলাষী পথভ্রষ্ট সৈনিক। উপরােক্ত দুটি হত্যাকাণ্ডই নির্মম, নৃশংস ও বর্বরােচিত কাজ বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে এবং তা ইতিহাসের স্বাভাবিক গতিধারায় পরিবর্তনও এনেছে। ...পরিবর্তন ইতিহাসের অমােঘ নিয়ম-একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রকৃত ঐতিহাসিকের কাজ হচ্ছে এই পরিবর্তন প্রবাহের গতিধারা ও প্রকৃতি সনাক্ত করে এর বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেয়া। এ গ্রন্থে ঘটনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নির্মোক নির্মোহভাবে ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে।