ছাব্বিশে মার্চ, ঊনিশশো একাত্তর। কাকতালীয়ভাবে ছেলেটি সেদিন দশ বছরে পা রেখেছে। তরতাজা কাঁচা সবুজ মন। চোখে নানা রঙের ঝিলিমিলি। কিন্তু সেই সবুজ-সতেজ মন, চারপাশের সাজানো সুন্দর পৃথিবী হঠাৎ করেই ভেঙে খানখান হয়ে গেল। সময়টা ছিল এদেশের স্বাধীনতার মহান ক্রান্তিলগ্ন। অনেক শতাব্দীর পরাধীনতার পর জেগে উঠেছে পুরো বাঙালি জাতি। মেনে নিতে পারেনি সে সময়কার শাসকেরা। সব রকম হিংস্রতা আর বর্বরতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এদেশের আপামর জনতার ওপরে। স্বভাবতই কোটি কোটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে অশেষ দুর্ভোগ আর অনিশ্চয়তা। বাঁচার তাগিদে ছেলেটির পরিবারও আর সবার মতো নিজ শহরছাড়া হয়েছে। পিছনে ফেলে আসতে হয়েছে একান্ত আপন বাড়িঘর, ভালোবাসার স্মৃতি। এরপর গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পালিয়ে বেড়ানো। কখনো-বা গ্রাম আর শহরে বসবাসের লুকোচুরি খেলা। অবরুদ্ধ প্রতিকূল জীবন। নানান দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ আর তিক্ত অভিজ্ঞতার শেষে একদিন এসে ধরা দিল স্বাধীনতার দৈবক্ষণ। আর এই সব দিনরাতের রুদ্ধশ্বাস যাত্রার অভিজ্ঞতা নিয়েই এই লেখনী। ছোট্ট সে ছেলেটির জীবনের, আশা-নিরাশা, আনন্দ-বেদনার চালচিত্র এই বই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ দেশে ভালো বইয়ের সংখ্যা কম নয়। তবে দশ বছরের জীবনচোখে দেখা এমনতর লেখা হয়তো এটাই প্রথম। সে বিবেচনায় এ বই আলাদা স্বাতন্ত্র্যের দাবি রাখে। এদেশের অনাগতকালের কিশোর-কিশোরি আর উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীদের কাছে এ বই তাই এক দলিল হয়ে থেকে যাবে।