"শাদা আগুনের চিতা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সব কিছু একাকার হতে থাকে উপন্যাসের মতাে দীর্ঘ এ গল্পে একাকার হতে থাকে। প্রাণবন্ত আর প্রাণহীন মানুষেরা। একাকার হতে থাকে নিজের শহর, পরবাসের শহর। বােঝা যায় না, এই গল্পের শুরু কোত্থেকে, কোন দিকে যাচ্ছে, আবার কোথায়ই-বা ফিরে আসছে। হয়তাে তা কোনও উদ্বাস্তু মানুষের গল্প। মানসিকভাবে ভয়ংকর রকম উদ্বাস্তু এক মানুষের গল্প। হয়তাে তা কোনও আশাবাদী মানুষের গল্প। মৃত্যুর পরও তাই ভাসছে সে স্বপ্নের মেঘমালাতে। নিজের গ্রাম-শহর ছেড়ে লােভনীয় এক শহরে পৌছেছে তারা। সেই শহরে জীবিত আর মৃত ব্যক্তিরা মিলেমিশে আছে। আবার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেখানে গিয়ে হাজির হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী খুনি আর ধর্ষকরা। গড়ে তুলছে নিজেদের নতুন আবাস, পাপপুণ্যের দীক্ষায় দীক্ষিত করছে জীবিকার অন্বেষণে। ছুটে আসা অপরাপর সকল মানুষকে। উদ্বাস্তু মানুষটিও চায় থিতু হতে, চায় আবাসন গড়তে। কিন্তু যতই সে থিতু হতে চায়, ততই আরও উদ্বাস্তু হতে থাকে সে। কখনও সে প্রথম পুরুষ হয়, কখনও দ্বিতীয়, কখনও বা পরিণত হয় তৃতীয়ে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তােড়ে সে আরও নগ্নভাবে উপলব্ধি করে, পাপপুণ্যের সংজ্ঞা প্রণীত হচ্ছে নতুন করে। যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি সহানুভূতিশীলতার অমিয়বাণী বর্ষিত হচ্ছে খড়কুটো খুঁজে ফেরা জীবনযাপনের প্রবল স্রোতে। অস্থির সে তার পুরানাে জীবিত কিংবা মৃত সব আত্মসমূহের সঙ্গে সংলাপের মধ্যে দিয়ে চেষ্টা করছে শান্ত ও স্বাভাবিক হয়ে থাকতে। চেষ্টা করছে জীবিত-মৃতযুদ্ধাপরাধীদের এই নগরে সামাজিক হয়ে উঠতে। একসময় সে অনুভব করে, তার অনুভূতিগুলাে নগরের ফরসা কুয়াশায় মৃত্যুর ফুল ফোটাচ্ছে। এই খাপছাড়া গল্পের কোনও মানে নেই। একমাত্র অস্থির, অধৈর্য সময়ের মানুষ ছাড়া কারও পক্ষেই বােধ করি সম্ভব নয়। শান্ত, নিস্তরঙ্গ হয়ে এর করুণ পরিণতি অনুভব করা।
জন্ম : ১৩৭১ বঙ্গাব্দ, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ ; সিরাজগঞ্জের সলপ জনপদের রামগাঁতী গ্রামে। মা : হামিদা সুলতানা। বাবা : চৌধুরী ওসমান। পেশা : সাংবাদিকতা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : এমএসএস [সমাজ বিজ্ঞান]; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ : ডানাকাটা হিমের ভেতর (উপন্যাস, ১৯৯৬)। অন্যান্য উপন্যাস : আমরা হেঁটেছি যারা, চরসংবেগ, অন্ধ মেয়েটি জ্যোৎস্না দেখার পর, মোল্লাপ্রজাতন্ত্রী পবনকুটির, তা হলে বৃষ্টিদিন তা হলে ১৪ জুলাই, আমাদের চিঠিযুগ কুউউ ঝিকঝিক, মৃত্যুগন্ধী বিকেলে সুশীল সঙ্গীতানুষ্ঠান, নীল কৃষ্ণচূড়ার জন্মদিনে, শাদা আগুনের চিতা, অন্তর্গত কুয়াশায়, যারা স্বপ্ন দেখেছিল। স্বীকৃতি : ‘মৃত্যুগন্ধী বিকেলে সুশীল সংগীতানুষ্ঠান’ গ্রন্থের জন্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার (২০১২), লোক সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩), জীবনানন্দ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৪), ‘শীতের জ্যোৎস্নাজাবলা বৃষ্টিরাতে’ গ্রন্থের জন্যে প্রথম আলো বর্ষসেরা সৃজনশীল গ্রন্থ পুরস্কার (১৪২১), কিশোর উপন্যাস ‘পাতার বাঁশি বাজে’র জন্যে শিশু একাডেমি পুরস্কার (১৪২১) এবং কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০২০)।