তিনি, জিয়া হায়দার, গত শতাব্দীর পাঁচ দশকের কবি। সাহিত্য-কর্ম শুরু করেছিলেন কবিতা দিয়ে। প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রন্থও কবিতার। পরে নাটক হয়ে ওঠে তাঁর আরাধ্য। তৃতীয় গ্রন্থ বিখ্যাত নাটক : শুভ্রা সুন্দর কল্যাণী আনন্দ। নাটক লেখা, পড়ানো, অনুবাদ ও রূপান্তর করা, নির্দেশনা দেওয়া এবং নাটক-বিষয়ে তথ্য ও বিশ্লেষণপূর্ণ মূল্যবান অনেক প্রবন্ধগ্রন্থ লিখলেও কখনো কবিতা লেখা বন্ধ করেননি অথবা বলা যায়, কবিতা তাঁকে কখনো ছেড়ে যায়নি। যে কোনো লেখাকে, তা কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ বা অনুবাদ যাই হোক, একাধিকবার নিষ্ঠাপূর্ণ শ্রমিকতায়, জিয়া হায়দার চেষ্টা করতেন নিখুঁত রূপ দেবার। কখনো অনেক লেখার পক্ষপাতী ছিলেন না। ফলে দেখা যায়, ৭২ বছরের জীবনে সব মিলিয়ে গ্রন্থ সংখ্যা ৩১, তার মধ্যে কবিতার বই আটটি। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রতিটি কবিতার বই আলাদা স্বর, ভাষা, প্রতিধ্বনি ও চিন্তার হতে হবে। এই সমগ্রের ৮-টি কাব্যগ্রন্থে পাওয়া যাবে তাঁর কবিতা-কর্মের শেকড়, শাখা, প্রশাখা এবং বহুমাত্রিক বিভাব। অনেক পৌরাণিক চরিত্রকে (রাধা, কৃষ্ণ, কংস, বড়ায়ি, বেহুলা, চাঁদ সওদাগর প্রমুখ) তিনি বিষয় ও বক্তব্যের প্রয়োজনেই কবিতায় তুলে এনেছেন, ব্যবহার করেছেন সমকালের বিবিধ প্রেক্ষিতে। কবি জিয়া হায়দার, কখনো ছন্দে ও প্রবহমান গদ্যে, কখনো নাট্যিক আবহে, প্রেম, ভালোবাসা, জীবনযাপনের দ্বন্দ্ব, পীড়িত মানুষের স্বপ্ন ও আর্তি, স্বদেশের অবক্ষয় এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মুখোশ এক পরিশীলিত নিজস্ব কাব্যভাষায় করেছেন চিত্রিত।