বড় রাস্তার কাঁধের ওপর, গলিতে ঢোকার মুখে একটি গর্ত। কেউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘গতকালও এখানে একটি ডাকবাক্স ছিল, তবে এমন জং ধরেছিল, লাল রং বোঝাই যেত না।’ একজন গর্তটার ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে কাউকে খুদে বার্তা পাঠায়। গর্তের মধ্যে পড়ে থাকা মরা ছায়ার দিকে তাকিয়ে কারো হয়তো মনে পড়ে, ‘ডাকবাক্সে কত চিঠি ফেলেছি, কত চিঠির উত্তর পাইনি, অপেক্ষা দিন-রাত ঘুমাতে দেয়নি।’ চিঠিপত্র সংক্রান্ত ইতিহাস বলে, প্রাচীন ভারত, চীন, মিসর ও গ্রিসে চিঠির কাজকর্ম ছিল। হোমারের ইলিয়াডে আছে চিঠির কথা। অনেক অতীতে প্রশিক্ষিত পাখি ঠোঁটে চিঠি নিয়ে সঠিক প্রাপকের কাছে পৌঁছে দিত। এই দেশে শের শাহ প্রচলিত ঘোড়ার ডাকের কথা আমরা জানি। চিঠির আছে বিবিধ চরিত্র। নিরপেক্ষ, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত। পত্র-সাহিত্য আলাদা ঘরানার, বিখ্যাত হয়ে গেছে ফিওদর দস্তয়েভস্কির ‘অভাজন’ এবং বাংলা ভাষায় আজও মহার্ঘ শিল্পমানে মান্য আমাদের প্রায় সর্বক্ষণের প্রেরণাসঙ্গী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছিন্নপত্র’। ‘দিনযাপনের খসড়া’ বইতে শাহীনা সোবহান সাবলীল ভাষায় জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা চিঠিফর্মে লিখেছেন। শাহীনা আমাদের জানান, তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ’৭১-এ শোনা গুলির শব্দের অভিজ্ঞতা অথবা সুখ-সংঘাতের আনন্দপূর্ণ চিত্রÑএইসব স্মৃতিছবি পাঠক পড়ার পর প্রায় এক অখণ্ড জীবন-আনন্দ বা সংকটের ছবি পাবেন, হয়তো নিজেই স্বতঃস্ফূর্ত স্বরে বলে উঠবেন, এসব তো আমারই কথা।